সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১০:৫৬:২৭

মুসলিমরা ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার: নিউ ইয়র্কের মেয়র

মুসলিমরা ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার: নিউ ইয়র্কের মেয়র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের কুইন্সে মসজিদের ইমামসহ দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মুসলিমরা ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার। দুই মুসলিম হত্যার একদিন পর  দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওই হত্যকাণ্ডের পর স্থানীয় মুসল্লিরা দাবি করেন, এই গুলি করে হত্যার ঘটনা ছিল ইসলামের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত। তবে পুলিশের দাবি, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই তারা নিহত হয়েছেন-এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদগুলোতে হামলার ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, আমরা এখনও মাওলানা আকুঞ্জি এবং থারা উদ্দিন-এর হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানি না। আমরা এটা জানি যে, আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার। এটা একটা সংকটময় পরিস্থিতি।

এদিকে নিউ ইয়র্কে ইমাম হত্যার পর আতঙ্কে ভুগছেন মার্কিন মুসলিমরা। নিউ ইয়র্কের বেশিরভাগ মুসলিম মূলত তাদের দুইটি আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রথমত এটা আমাদের যে কারও সঙ্গেই ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়েই কথিত ইসলামভীতির প্রপাগাণ্ডা শুরু হয়নি। তবে ট্রাম্পই এর ডালপালা ছড়িয়েছেন। ইমাম হত্যার পর এমনটাই উঠে এসেছে মুসলিমদের ভাষ্যে। ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি যে মসজিদে ইমামতি করতেন সেখানকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম (৩৩)। তিনি বলেন, এটা প্রকৃত আমেরিকার চিত্র নয়। আমরা এ ঘটনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করছি। ট্রাম্প ও তার নাটক ইসলামভীতি সৃষ্টি করেছে।

১৩ আগস্ট ২০১৬ শনিবার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি ও তার সহকারী থারা উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি (৫৫) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। দুই বছরেরও কম সময় আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একজন প্রসিদ্ধ আলেম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ২টার দিকে নিউ ইয়র্কের কুইন্সে প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওজোন পার্ক এলাকার আল ফুরকান জামে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে তারা খুন হন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় তারা দুজনই ঐতিহ্যবাহী ইসলামি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এর কয়েক মিনিট আগেই আল ফুরকান জামে মসজিদে তারা একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

নিহত ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র ভাই মাশুক উদ্দিন জানান, একটি বুলেট ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র মস্তিষ্কে আঘাত করে। মৃত্যুর আগে তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি খুবই মর্মাহত। পুরো শরীর কাঁপছে। কারও সঙ্গে তার কোনও বিরোধ ছিল না। তিনি শুধু মসজিদে যেতেন, নামাজ পড়তেন এবং বাসায় ফিরতেন। আমরা সবাই কান্নাকাটি করছি। এটা খুব বেদনাদায়ক। ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র ভাতিজা ২৬ বছরের রাহি মাজিদ। তিনি জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার কোনও ঝামেলা ছিল না।

রাহি মাজিদ বলেন, ‘তিনি একটি মাছিকেও আঘাত করতে পারেন না। আমি নিশ্চিত নই যে, কি ধরনের একটা পশু এই মানুষটিকে খুন করেছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র সহকারীর নাম থারা উদ্দিন (৬৫)। গুলিবিদ্ধ হওয়ার চার ঘণ্টার মাথায় তার মৃত্যু হয়।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের একজন মুখপাত্র টিফানি ফিলিপস এ জোড়া খুনের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকার একটি রাস্তায় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

মুসল্লিদের দাবি, ধর্মীয় কারণেই সুনির্দিষ্টভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড মুসলিমদের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।

আল ফুরকান জামে মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি মসজিদের সভাপতি কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা বিচলিত, বিধ্বস্ত। আমাদের এর গভীরে যাওয়া দরকার। এটা জানা দরকার যে, শুধু ধর্মীয় কারণেই তারা এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি আকস্মিকভাবে পাঁচটি গুলির শব্দ শুনেছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটা বাজির শব্দ নয়।
১৫ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে