রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬, ০৬:৫১:৫২

সাগর পেরিয়ে ‘দস্যু’ আসছে, বানভাসির আশঙ্কা

সাগর পেরিয়ে ‘দস্যু’ আসছে, বানভাসির আশঙ্কা

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়: ঘরের শত্রুর হামলা ফি-বছরই সইতে হয় দক্ষিণবঙ্গকে। এ বার সাগরপথে ধেয়ে আসছে বিদেশি শত্রু! এমনকী তাকে ‘মগ দস্যু’ বললেও হয়তো ভুল হয় না। কারণ, সুদূর মায়ানমার থেকে আসছে সে এক হানাদার-নিম্নচাপ!

তার প্রভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, এমনকী বানভাসি পরিস্থিতিরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। আবহবিদদের একাংশের আশঙ্কা, গতিপথের আচমকা পরিবর্তন না হলে আজ, রবিবার থেকেই হয়তো রাজ্যের দক্ষিণ অংশে শুরু হবে সেই নিম্নচাপের দাপট।

বঙ্গোপসাগরের অতি গভীর এক নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টি হয়েছে দিন কয়েক আগেই। মিনিট সাতেকের ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল মহানগরের জনজীবন। গিয়েছিল প্রাণও। এ বার যে গভীর নিম্নচাপটি দক্ষিণবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে তার আঁতুড়ঘর আর বঙ্গোপসাগর নয়, সুদূর দক্ষিণ চিন সাগর!

আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এই নিম্নচাপের জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে ঝাড়খণ্ডেও। ফলে দামোদর উপত্যকার নদীগুলিতে জলস্তর বেড়ে বিপর্যয় হতে পারে।

আবহাওয়া দফতর আজ, রবিবার থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে। যা নিয়ে শনিবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচ দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় নেমেছে তারা।

রাজ্যকে না জানিয়ে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়তে বারণ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-কে। এক কথায় দস্যু ঠেকাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতা রাজ্যে। কী ভাবে মাথাচাড়া দিল ‘দস্যু’?

হাওয়া অফিসের খবর, সম্প্রতি দক্ষিণ চিন সাগরে ‘দিয়ানমু’ নামে একটি ঘূর্ণিঝড় দানা বেঁধেছিল। প্রথমে ভিয়েতনামে তা আছড়ে পড়েছিল। তার পর দুর্বল হতে হতে হাজির হয়েছে মায়ানমারে। সেখানে এসে সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি।

কিন্তু উপগ্রহ-চিত্র নেড়েঘেঁটে আবহবিদেরা বলছেন, এ বার তার গতিপথ বাংলাদেশ উপকূল হয়ে দক্ষিণবঙ্গের দিকে। এবং এই পথ চলার ফাঁকেই ফের শক্তি বাড়াতে পারে সে। সাধারণ নিম্নচাপ থেকে হয়ে উঠতে পারে গভীর নিম্নচাপ।

ঘূর্ণিঝড় সাধারণত স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার পর শক্তি খোয়াতে খোয়াতে বিলীন হয়ে যায়। তা হলে ভিয়েতনাম-মায়ানমারের মাটি ছোঁয়া এই নিম্নচাপ ভারতের পথে শক্তি বাড়াবে কী করে?

কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, মায়ানমার থেকে দক্ষিণবঙ্গে আসার পথে তো সাগর পেরোতে হবে ওই নিম্নচাপকে! এই সময়েই সে সাগর থেকে জলীয় বাষ্প টেনে ফের শক্তি বাড়াবে।

নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তির উৎসই হল ওই জলীয় বাষ্প। তাই যত ক্ষণ তারা সাগরের উপরে থাকে, তত ক্ষণ শক্তিও বাড়তে থাকে। স্থলভূমিতে ঢোকার পরে তারা বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করে। কিন্তু নতুন শক্তির জোগান না থাকায় ক্রমশ দুর্বলও হয়ে পড়তে থাকে। গোকুলবাবু বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে ঢোকার পরে বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে ঝাড়খণ্ডের মালভূমি এলাকায় পৌঁছবে গভীর নিম্নচাপটি।

সেখানেও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।’’ আবহাওয়া দফতরের খবর, এই সতর্কবার্তা ইতিমধ্যেই ডিভিসিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতি ভারী বৃষ্টি হলে কী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা অবশ্য ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন।

হঠাৎ করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি শত্রুর চোখ পড়ল কেন? এমনটা তো সাধারণত দেখা যায় না! আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, দক্ষিণ চিন সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ মায়ানমারে ঢুকেছিল বটে। কিন্তু তার অভিমুখ ছিল পশ্চিম দিকে। ফলে পশ্চিমে সরতে সরতে ক্রমশ স্থলভূমি পেরিয়ে সে বঙ্গোপসাগরে হাজির হয়েছে।

মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, বহিঃশত্রুকে ঘরে টেনে আনার পিছনে বর্ষাও অনেকটা দায়ী। বঙ্গোপসাগরে এই সময়ে বর্ষা সক্রিয়। দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে রয়েছে মৌসুমি অক্ষরেখা। ফলে সেই অক্ষরেখা সাগর থেকে বর্ষার জোলো হাওয়া টেনে আনছে। ‘‘ওই অক্ষরেখা বরাবরই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে নিম্নচাপটি,’’ বলছেন ওই বিজ্ঞানী।

আবহবিদদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, আবহাওয়ার মতিগতি এখন বেজায় খামখেয়ালি হয়ে রয়েছে। ফলে যে কোনও সময়েই পরিস্থিতির আচমকা বদল ঘটতে পারে। যার সর্বশেষ উদাহরণ গত বুধবার সন্ধ্যার ঝড়।

অতি গভীর নিম্নচাপ যে আচমকা ঝড় হয়ে আছড়ে পড়তে পারে, তা আঁচ করতে পারেননি হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরাও। সেই সূত্রেই কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, গভীর নিম্নচাপ আবার ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে না তো? উত্তরে আবহবিদদেরা বলছেন, এ দিন রাত পর্যন্ত নিম্নচাপটির যে গতিপথ রয়েছে, তাতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সময় পাবে না সে।

কিন্তু আচমকা মুখ ঘুরিয়ে যদি সে আরও দক্ষিণে নেমে যায়, সে ক্ষেত্রে আবার পরিস্থিতির বদল হতে পারে। আশঙ্কা বাড়তে পারে অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলের। সেই বদল কি হবে? উপগ্রহ-চিত্রে টানা চোখ রেখে প্রহর গুনছে হাওয়া অফিস।-আনন্দবাজার

২১ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে