বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ০৩:৫০:৩৮

হাসপাতালে লুকিয়ে শর্মিলার সঙ্গে দেখা করলেন বৃদ্ধা মায়ের

হাসপাতালে লুকিয়ে শর্মিলার সঙ্গে দেখা করলেন বৃদ্ধা মায়ের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মায়ের সঙ্গে মেয়ের দেখা হল! তা-ও লুকিয়ে। মণিপুরের ‘লৌহমানবী’ ইরম শর্মিলা চানুর সঙ্গে গত শনিবার দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁর ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা। মা-মেয়ের দেখা হওয়ার কথা জানিয়েছেন শর্মিলার দাদা সিংহজিৎ।

গত ৯ অগস্ট বোন অনশন ভাঙার পরই তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে যেতে চেয়েছিলেন সিংহজিৎ। কিন্তু শর্মিলা রাজি হননি। জানিয়েছিলেন দেখা করবেন না মায়ের সঙ্গেও। কারণ, ১৬ বছর আগে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মণিপুর থেকে আফস্পা (আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট) প্রত্যাহার না-হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন, মায়ের সঙ্গে দেখাও করবেন না। তবে শেষমেশ দেখা হয়েছে মা-মেয়ের। ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের ঘরে কয়েকমিনিট কথাও হয়েছে তাঁদের।

প্রসঙ্গত, বছরকয়েক আগে একবার সখীদেবী অসুস্থ হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। খবর পেয়ে গভীর রাতে মেয়ে গিয়েছিলেন মায়ের বেডের কাছে। অবশ্য মা’কে চোখের দেখা দেখেই চলে যান তিনি।

শনিবারের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সিংহজিৎ এদিন বলেন, ‘‘মায়ের বয়স ৮৫ বছর। খুব দুর্বল। শর্মিলার সঙ্গে বারবার দেখা করতে চাইছিলেন। আমরা হাসপাতালের সুপারকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু বাকি সকলকে শর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হলেও আমাদের ওঁরা অনুমতি দেননি।’’

সিংহজিতের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার জেরে বাধ্য হয়ে অনুমতি ছাড়াই মা সখীদেবীকে নিয়ে তিনি এবং তাঁর আরেক বোন হাসপাতালে গিয়েছিলেন গত শনিবার। সকালের দিকে যখন হাসপাতালে লোকজন কম থাকে, সেই সময় গিয়েছিলেন তাঁরা।

সিংহজিৎ বলেন, ‘‘মা’কে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। কারণ, উনি ঠিকমতো চলাফেরাই করতে পারেন না। তাই মা’কে হুইলচেয়ারে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সকালে গিয়েছিলাম, কারণ তখন লোকজন কম থাকে। গেটের নিরাপত্তারক্ষীদের বুঝিয়ে শর্মিলার ঘর পর্যন্ত পৌঁছই। এরপর মা’কে শর্মিলার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি আর বোন বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।’’

কী কথা হল মা-মেয়ের? দাদা জানাচ্ছেন, মা শর্মিলাকে বলেছেন, ‘আমি শুনেছি, তুমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা বলেছ। সেটা করলে ভুল করবে। আমরা চাই, তুমি বাড়ি ফিরে এসো। আমরা তোমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।’

শর্মিলা কি রাজি হলেন? দাদা জানিয়েছেন, শর্মিলা হ্যাঁ বা না কোনওটাই বলেননি। তবে তিনি এত ক্ষীণ গলায় কথা বলছিলেন যে মা মেয়ের কথা ঠিকমতো বুঝতে পারেননি। সিংহজিৎ জানিয়েছেন, তাঁদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসপাতালের কর্মচারীরা ছুটে আসেন। তারপর একরকম ধাক্কা মেরেই তাঁদের হাসপাতালের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।

পরে যখন তাঁরা সখীদেবীকে শর্মিলার ঘরে দেখেন, তখন তাঁকেও বের করে দেওয়া হয় বলে শর্মিলার দাদার অভিযোগ। 
ক্ষুব্ধ সিংহজিৎ বলেন, ‘‘আমরা অনেক অনুরোধ করলাম। বললাম, মা’কে নিয়ে তো বারবার আসা সম্ভব নয়! আরেকটু সময় যদি মা’কে শর্মিলার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। কিন্তু ওঁরা রাজি হলেন না। শর্মিলা এমন কী করেছে যে, বাড়ির লোকেরাই ওর সঙ্গে দেখা করতে পারবে না?’’ 

শর্মিলা হাসপাতাল থেকে কবে ছাড়া পেতে পারেন, তা নিয়ে আদালতে এদিন শুনানি ছিল। সকাল ১১টা নাগাদ শর্মিলা আদালতে পৌঁছন। শুনানি চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আদালত জানিয়েছে, চিকিৎসার জন্য তাঁর আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকা প্রয়োজন।

পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর। সিংহজিতের প্রশ্ন, ‘‘শর্মিলাকে ওরা আটকে রাখার চেষ্টা করছে কেন? আশা করছি, ৫ তারিখ আদালত ওকে হাসপাতাল থেকে বেরনোর অনুমতি দেবে।’’-সংবাদ প্রতিদিন

২৪ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে