আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাত সেকেন্ডের কম্পন ‘অসমাপ্ত’ রেখে দিল রাজ্যের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নবান্নে বুধবার সাড়ে ৩টে থেকে শুরু-হওয়া ভিডিও কনফারেন্সে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা। ৪টে নাগাদ দুলে ওঠে গোটা নবান্ন। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করেই কনফারেন্স কক্ষ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন সকলে। দ্রুত নবান্নের বাইরে চলে আসেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের প্রধানসচিব গৌতম সান্যাল, রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিব এবং আধিকারিকেরা।
বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল রাজ্যভিত্তিক আটকে থাকা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে জটমুক্ত করা। রাজ্যগুলির সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মুখ্যসচিবের কাছ থেকে জানতে চান। সমাধানের ব্যাপারে মত বিনিময় হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে ভিডিও কনফারেন্সে মুখ্যসচিব জানাচ্ছিলেন, রাজ্যের প্রকল্পগুলির অগ্রগতি সন্তোষজনক। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে। তার পরেই প্রধানমন্ত্রী অন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। তখনই কেঁপে ওঠে চারদিক।
মুখ্যসচিব টের না পেলেও অন্য আধিকারিকেরা তা বুঝতে পারেন। মুখ্যসচিবকে জানানো হয় বিষয়টি। কাঁপুনির তীব্রতায় কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আধিকারিকদের কেউ কেউ। ভীত এক বঙ্গজ সচিব অনভ্যাসের হিন্দির সঙ্গে বাংলা মিশিয়ে জানান, দ্রুত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি জানিয়ে বৈঠক শেষ করার অনুমতি চাওয়া হোক। কিন্তু মোদী অন্য রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত থাকায় তা তাঁকে জানানো যায়নি।
শেষপর্যন্ত মুখ্যসচিবের সম্মতিক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রযুক্তি বিভাগের (যাঁরা ভিডিও কনফারেন্স পরিচালনা করেন) সঙ্গে রাজ্যের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞেরা যোগাযোগ করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। বলা হয়, নিরাপত্তার কারণে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া উচিত। দিল্লির সম্মতি পেয়ে সকলে বেরিয়ে আসেন। পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটতে কয়েক মিনিটের বেশি লাগেনি।
বৈঠক কক্ষ থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি ভেঙেই নবান্নের নীচে চলে আসেন শীর্ষ আমলারা। তখন অনেক কর্মী-আধিকারিক নেমে এসেছেন। পরিস্থিতি কিছুক্ষণ পরখ করে ডিজি’কে মুখ্যসচিব বলেন, কর্মীদের ছুটি ঘোষণা করে তাঁদের নবান্ন ছাড়তে বলা হোক। ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে’ সেই নির্দেশ ঘোষণা করা হয়। ঘটনাচক্রে, আজ বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকারি দফতর ছুটি। তার আগে ভূমিকম্পের কল্যাণে নবান্নের কর্মীরা একটু আগেই বাড়ি ফেরার পথ ধরতে পেরেছেন।
নিরাপত্তাকর্মীদের পরামর্শক্রমে শীর্ষ আমলারা নবান্ন চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে একেবারে বাইরের রাস্তায় দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে অবশ্য সটান গাড়ি ডেকে এলাকা ছেড়েই চলে যান। তবে সরকারি কাজে কয়েক সেকেন্ডের কম্পন যেভাবে ‘ব্যাঘাত’ ঘটিয়েছে, তা সম্ভবত মেনে নিতে পারেননি স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে। ফোনে তাঁকে এক আধিকারিককে বলতেও শোনা যায়, ‘‘কী? ভয় করছে না কি?’’
তবে বিপরীত চিত্রও ছিল। অনেক আধিকারিক দফতর ছেড়ে নীচে নামেননি। তাঁদের যুক্তি, নবান্নের যা গঠন বৈশিষ্ট্য, তাতে অল্প কম্পনে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একজনের কথায়, ‘‘নবান্ন দুর্ঘটনার মুখে পড়লে ধরে নিতে হবে, শহরের কোনও ভবন সুরক্ষিত থাকবে না!’’
নবান্নের বাইরে রাস্তা সংলগ্ন চত্বরে চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন শীর্ষ আমলারা। পরে নিজেদের দফতরে ফিরে গিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা।
প্রশাসনের একাংশের অভিমত, ‘অকাল ভূমিকম্প’ না-হলে আরও কয়েকটি বিষয় আলোচনা হতে পারত। আধার কার্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কম্পন সেই প্রসঙ্গ তুলতে দেয়নি।
যদিও এক কর্তা বলেন, ‘‘বৈঠক অসমাপ্ত বলা উচিত হবে না। রাজ্যের বিষয়গুলির প্রায় পুরোটাই আলোচিত হয়েছিল। রাজ্য নিজের মতামতও জানিয়েছিল। তবে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলে আরও কয়েকটি বিষয় হয়তো আলোচিত হতে পারত।’’
নবান্নের মতোই এদিন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা শহর জুড়ে। অফিস খালি করে লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে যান। মেট্রোরেল দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। যাতে তাঁরা মাটির উপরে উঠে আসতে পারেন। খালি করে দেওয়া হয় শহরের শপিং মলগুলিও। তবে রাত পর্যন্ত কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। -এবেলা
২৫ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম