শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:২৪:২৬

'মেয়ে হয়ে জন্মানোই কি এদের অপরাধ'?

'মেয়ে হয়ে জন্মানোই কি এদের অপরাধ'?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুই বোন। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৮, একজনের ৩। পুলিশ যখন ঘরের দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করল, তখন ভাঙা খাটে পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে শুয়েছিল তারা। মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। এক সপ্তাহ কেটে গেছে, পেটে কিচ্ছু পড়েনি। মনে হচ্ছে মেয়ে হয়ে জন্মনোই তাদের অপরাধ!

ভারতের রাজধানীতেই এমন অন্ধকার যুগের কথা আগে যেন কারোই জানা ছিল না। এমন আরো কত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে তার কোনো হদিস নেই। উত্তর পশ্চিম দিল্লির সময়পুর বাদলি এলাকায় বাবা, মা, ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকত ৮ বছরের হিমাংশি আর ৩ বছরের দীপালি। বাবা বান্টির চাকরি চলে গেছে, আর তাই বাড়িতে চলছে নিত্য অশান্তি। এই অবস্থায় ৫ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দু’মাস আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাদের মা রজনী। নেশাখোর স্বামীর ভরসায় দুই ছোট্ট মেয়েকে রেখে। বেকার, বাবা আর কতদিন বইবে গলগ্রহ দুই মেয়ের ভার? ১৫ অগাস্ট, ভারতের ৭০ বছরের স্বাধীনতা দিবসে যখন মগ্ন সারা দেশ, তখন এক নোংরা গন্ধময়, গলির মধ্যে ছোট্ট একটা ঘরে এই দুই মেয়েকে রেখে দরজা বন্ধ করে চলে যায়ন তিনি। তারপর থেকে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে মৃত্যুর দিন গুণছিল দুই ক্ষুধার্ত শিশু। আর যাই হোক, সে তো আর তাদের ভুলে যাবে না, তাদের মায়ের মত।

বড় মেয়ে হিমাংশির মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতে বাসা বেঁধেছে পোকা, দুর্গন্ধে তার পাশে যাওয়া যাচ্ছে না। সেই দুর্গন্ধের চোটেই প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেয়। ১৯ তারিখ পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখে, ঘরে মাছি, মশা, পোকামাকড় ভর্তি, খাট থেকে পোকা উঠে বাসা করেছে হিমাংশির মাথায় পুরো শরীরে, একটু আলো বাতাস পর্যন্ত ঢোকার ব্যবস্থা নেই সেই ঘরে। মৃতপ্রায় মেয়েদুটিকে পুলিশ নিয়ে যায় রোহিণীর ভীমরাও আম্বেডকর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলছে তাদের। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলছে, মেয়ে হয়ে জন্মানোই কি তাদের অপরাধ?

সময়পুর বাদলি পুলিশ স্টেশনে হিমাংশি ও দীপালির জন্য সাহায্য চেয়ে ক্যাম্পেন শুরু করেছে পুলিশ। নিজেদের টাকায় মেয়েদুটির জন্য খাবার, জামাকাপড়, খেলনা কিনে এনেছে তারা। খবর নিয়ে দেখা গেছে, মেয়েদুটির নানি অর্থাৎ নিজের মাকে বান্টি বাড়ি থেকে বার করে দেয়। কিছুদিন রাস্তায় কাটানোর পর এখন ৮০ বছরের বুড়ির ঠাঁই হয়েছে এক বৃদ্ধাশ্রমে। তবে দুই নাতনির দায়িত্ব নিতে সে অপারগ। দিল্লি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে পুলিশকর্মীরা যোগাযোগ করেছেন। ঠিক হয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে বাচ্চাদুটিকে পাঠানো হবে কোনো পুনর্বাসন কেন্দ্রে। অন্তত কিছুদিন মাথার ওপর একটা ছাদ পাবে তারা। কিন্তু তারপর? এই দুই শিশুমুখও কি মিশে যাবে দেশের অসংখ্য পিতৃমাতৃহীন পথশিশুর ভিড়ে?-এবিপি আনন্দ
২৬ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/শান্ত/মো:শাই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে