স্পোর্টস ডেস্ক: হেনরিখ ক্লাসেন ও নিকোলাস পুরানের মতো তারকারা যখন এত কম বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আসলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কোথায়?
এই প্রেক্ষাপটে ক্রিকেট বাঁচাতে আইসিসিকে বড় পরামর্শ দিয়েছেন ক্লাসেন নিজেই। তার মতে, আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মধ্যে ভারসাম্য আনতে আইসিসির উচিত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া, যখন শুধুই আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে খেলোয়াড়দের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও লিগের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ অনেক সময় লিগ খেলতে গিয়ে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ মিস করতে হয়। আবার জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করলে লিগ থেকে আয় ও সুযোগ হাতছাড়া হয়।
ক্লাসেন প্রস্তাব দিয়ে জানান, যদি বছরে ৩-৪ মাস শুধুই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নির্ধারিত থাকে এবং বাকি সময়গুলো লিগগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে খেলোয়াড়রা দুই দিকেই সময় দিতে পারবে। এতে খেলোয়াড়দের চাপও কমবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মর্যাদাও বজায় থাকবে।
এই পরামর্শ বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তা সময়ই বলবে, তবে একের পর এক তারকা ক্রিকেটারের বিদায় যে আইসিসিকে চিন্তায় ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
ক্রিকবাজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্লাসেন বলেন, ভবিষ্যতে আরও অনেক ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দিকে ঝুঁকবেন। তাই এখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সময় বলে মনে করেন তিনি।
ক্লাসেনের মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডার পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজগুলো বাদ দেয়া উচিত। এর বদলে আরও বেশি টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করা যেতে পারে, বিশেষ করে যেসব দল টেস্ট খেলার সুযোগ কম পায় তাদের জন্য। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচও বাড়ানো দরকার, কারণ মানুষ এই ফরম্যাটই বেশি উপভোগ করে।
ক্লাসেনের মতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ রাখা উচিত। তার প্রস্তাব হলো বিশ্বকাপের আগে প্রতিটি দলকে পাঁচটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া, যাতে খেলোয়াড়রা ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন।
ক্লাসেন আরও মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতের ক্রিকেটারদের বাদ দিলে, বাকি দেশগুলোর বোর্ডগুলো পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক দিতে পারে না। ফলে খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বেছে নিচ্ছেন। যেখানে তারা বেশি আয় করতে পারেন।
উদাহরণ হিসেবে ক্লাসেন বলেন, স্টার্ক ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইপিএলে খেলেননি। হ্যারি ব্রুকও সাম্প্রতিক সময়ে আইপিএল থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছেন। এর মানে বোর্ডের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে খেলোয়াড়রা টিকে থাকতে পারেন। কিন্তু অনেক বোর্ডই তাদের খেলোয়াড়দের যথাযথভাবে যত্ন নেয় না।
ক্লাসেনের মতে, এখন সময় এসেছে আইসিসির হস্তক্ষেপের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে টিকিয়ে রাখতে হলে খেলোয়াড়দের বিশ্রাম এবং আর্থিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আইসিসিকে এখন বলতে হবে, কিছু খেলোয়াড় আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে এবং ধরে রাখতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। একজন ক্রিকেটারের পক্ষে সব ফরম্যাট এবং সব লিগ খেলা সম্ভব নয়। শেষমেশ তারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
ক্লাসেনের ধারণা, সামনে এমন সময় আসবে যখন ক্রিকেটাররা নির্দিষ্ট একটি বা দুটি ফরম্যাটে মনোযোগ দিবে। কেউ টেস্ট বেছে নেবে, কেউ টি-টোয়েন্টি। যারা সব ফরম্যাট খেলতে চাইবে তাদের পক্ষে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা কঠিন হবে। আবার যারা লিগ খেলবেন, তারা জাতীয় দলের হয়ে সব ফরম্যাটে খেলার সুযোগ নাও পেতে পারেন।