আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আকাশে বিমান উড়ার শব্দ পেলে তা দেখেন উৎসুক অনেকেই। তবে যে রুটে সচরাচর বিমান উড়তে দেখা যায় না, সেই রুটে বিমান উড়লে কৌতূহল একটু বেশিই থাকে। কিন্তু সেই কৌতূহল এমন বিধ্বংসী হবে কেই বা জানতো। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (৯/১১) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ৯টা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারের দিকে দুটি বিমানকে ধেয়ে আসতে দেখে স্থানীয়রা হতচকিত। কারণ, এই রুটে তারা সচরাচর বিমান চলতে দেখেনি।
কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে এ দুটি বিমান দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। বিমান দুটি আছড়ে পড়ল টুইন টাওয়ারের ওপর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধসে পড়ে বিশ্বের অন্যতম উঁচু দুটি টাওয়ার।
ওইদিন মোট চারটি বিমান ছিনতাই করা হয়। বাকি দুটি বিমানের একটি নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। একটি বিমান যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে আকাশেই বিধ্বস্ত হয়। ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন।
আজ থেকে দেড় দশক আগের এই ঘটনাতেই বদলে যায় বিশ্ব রাজনীতি। বিশ্বব্যাপী শুরু হয় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। সে যুদ্ধ আজও চলছে। যার শুরুটা হয়েছিল আফগানিস্তানে হামলার মধ্যদিয়ে।
হামলার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওসামা বিন লাদেনের ওপর। শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী 'অনন্ত যুদ্ধ'। বিন লাদেনকে হস্তান্তর না করায় আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলছে সেই যুদ্ধ।
টুইন টাওয়ারে হামলার প্রভাব আরও অনেক সুদূরপ্রসারী। ঘটনার দেড় দশক পেরিয়ে এখনো সেই রেশ টেনে বেড়াচ্ছে বিশ্ববাসী।
ওই হামলার ঘঠনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মনে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা নিরাপত্তার বোধ ভেঙে পড়ে। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, যা এখনও অব্যাহত আছে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তার অজুহাতে খড়্গ নেমে আসে ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর। হামলাকারীরা মুসলিম নামধারী হওয়ায় পশ্চিমজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ইসলাম-বিদ্বেষ যার হিসেবে কড়ায়-গণ্ডায় দিচ্ছেন মুসলিমরা।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ঘোষণা- 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে হয় আমাদের সঙ্গে, না হয় আমাদের বিরুদ্ধে (মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেই)।' আর এতে বিভাজিত হয়ে পড়ে বিশ্ব। কেউ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে, আর যারা তাদের হয়ে লড়েনি তাদের হয়েছে বিনাশ।
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম