আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বহু আকুতি মিনতি করেও কেউ এগিয়ে আসেনি। অবশেষে রাস্তার পাশেই সন্তান প্রসব করেন এক মা।
ওই মাকে ১০০ মিটার দূরের হাসপাতালে পৌঁছে দিতে কেউ এগিয়ে না আসায় প্রসব বেদনায় রাস্তার পাশেই খোলা আকাশের নিচে জন্ম দিলেন এক পুত্র সন্তান।
পাশে বসেছিল অসহায় আরো তিনটি ছোট ছোট সন্তান। পথচারী মানুষ আছে অনেকে, কিন্তু কেউই ফিরে তাকায়নি।
এমনই অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকল ভারতের ঝাড়খণ্ডের লাতেহার। জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নিচে সদ্য প্রসব হওয়া সন্তানকে নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মা সোনামণি।
যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তিনি। ওড়িশার কলাহান্ডির দানা মাঝি তার স্ত্রীর দেহ ঘাড়ে করে বহু পথ হেঁটে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ছবি দেখে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়েছিল। লাতেহারের হেসলা গ্রামের সোনামণি, ৭৫ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নিচেই পুত্র-সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি।
পূর্ণ গর্ভবতী সোনামণি তার তিন সন্তানের আঁধার কার্ড তৈরি করানোর জন্য হেসলা গ্রাম থেকে বের হন শনিবার দুপুরে।
তার এক আত্মীয়া মানু কুমারী বলেন, ওই শারীরিক অবস্থার কারণে ওকে একা একা তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে সদরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও বলল, ওই দিনই ওকে যেতে বলা হয়েছে।
স্বামী নন্দকিশোর কাজে চলে যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা সোনামণি একাই তিনটি বাচ্চা নিয়ে দশ কিলোমিটার হেঁটে লাতেহারে আসেন।
কিন্তু শুক্রবারের সপ্তাহান্তে ততক্ষণে সরকারি অফিসে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে তিনি জাতীয় সড়কের ধারে একটা ধাবায় তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে আশ্রয় নেন।
রাতে ধাবা বন্ধ হয়ে গেলে তার পাশে একটা গাছের নিচে শুয়ে পড়েন তারা। আজ লাতেহারের জেলা স্বাস্থকেন্দ্রে শুয়ে সোনামণি জানান, ‘রাত থেকেই তার শরীর বেশি খারাপ করছিল’।
‘ভোর বেলা তার প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। পথচলতি সবার কাছেই তিনি হাতজোড় করে সাহায্য চান। কেউ এগিয়ে আসেনি। শেষে রাস্তার ধারেই তার বাচ্চা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কেউ হাসপাতালে খবর দেয়। কোনো লাভ হয়নি।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বরাতজোর বেঁচে গেছেন ওই মহিলা ও তার সদ্যোজাত। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার এস পি সিংহ বলেন, ‘মা ও সদ্যোজাত, দু’জনেই এখন ভালো আছে। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভাগ্যিস এ দিন ভোরে বৃষ্টি হয়নি’।
মাত্র একশ’ মিটার দূরে থেকেও কেন তৎপরতা দেখায়নি স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি? কেন অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি পাঠানো হয়নি? চিকিৎসক সুরেন্দ্র প্রসাদ নীরব।
তবে লাতেহার জেলার সিভিল সার্জেন রাজেশ্বর সিংহ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর গাড়ি পাঠাতে দেরি হয়নি। আমাদের কাছে খবর আসে ছ’টা নাগাদ‘।
‘আমরা পনেরো মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। কিন্তু ততক্ষনে ওই মহিলার বাচ্চা জন্মে গেছে। পরে আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সেই ওকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়’। তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার
১১ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম