মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:৩৬:১২

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি শুরু, তবু সংশয়

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি শুরু, তবু সংশয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ায় রুশ-মার্কিন ঘোষিত অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের কিছু সময় আগে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সমগ্র সিরিয়াকে ‘সন্ত্রাসীদের’ হাত থেকে রক্ষার ঘোষণা দেওয়ায় সংশয়ে পড়েছে বিদ্রোহীরা।

সোমবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের অধিকৃত অঞ্চলের সবটুকুই পুনরুদ্ধার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার অস্ত্রবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে সামাজিক মাধ্যমে আসাদের এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। দামেস্কের এক শহরতলী দারাইয়া সফরকালে এ ঘোষণা দেন আসাদ। তিনি বলেন, ‘সিরিয়া রাষ্ট্রের সকল বিদ্রোহী অধিকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা হবে।’

অন্যদিকে, কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্রবিরতিতে তাদের ওপর আক্রমণ না চালানোর নিশ্চয়তা চেয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আলকায়েদা সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো এ যুদ্ধবিরতির মধ্যে পড়বে না এবং তাদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে লড়াই আগের মতোই চলছিল। সোমবার সকালে দারাইয়া শহর সফরে যান আসাদ। শহরটির প্রতিকী গুরুত্ব অপরিসীম। রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে এই শহরে মাত্র গত মাসেই বিদ্রোহীরা চার বছরের অবরোধ প্রত্যাহার করে আত্মসমর্পণ করে। আসাদ শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তাগুলো দিয়ে হেঁটে গিয়ে সেখানকার একটি মসজিদে নামাজ পড়েন।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তার বিজয়কে সবার সামনে তুলে ধরতেই তিনি ওই শহরে যান বলে মনে করা হচ্ছে। বিজয় এসেছে ব্যাপক বোমাবর্ষণ এবং অবরুদ্ধ নগরবাসীদের অনাহারের বিনিময়ে। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, তিনি সমগ্র সিরিয়াকে বিদ্রোহীর হাত থেকে মুক্ত করবেন।

প্রেসিডেন্ট আসাদ তার বিরোধী সব গোষ্ঠীকেই ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র প্রতিরক্ষা ও কূটনীতি বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কাস বলছেন, এই সন্ত্রাসী সংজ্ঞার আরও তাৎপর্য রয়েছে, কারণ রুশ-মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় এই যুদ্ধবিরতি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আইএস এবং আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে মস্কো এবং ওয়াশিংটন তাদের বিমান হামলা চালিয়ে যেতে চায়। এখন কোনও কোনও বিদ্রোহী গ্রুপ আমেরিকা এবং তার মিত্রদের সমর্থন পায়। এদের মধ্যে থেকে কারা কারা আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট অতএব যুদ্ধবিরতির বাইরে – তা আলাদা করা সহজ নয়।

এ জন্যই বিরোধী গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধবিরতি নিয়ে সন্দিহান। তারাও লক্ষ্যবস্তু কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে তারা। সে কারণে তারা জানতে চাইছে, এর আওতায় কাকে কাকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ তাদেরও ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলে তারাও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হবে। তাই যুদ্ধবিরতি কতোটা সফল হবে, তা এখনও অন্য অনেককিছুর ওপর নির্ভরশীল।

উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ২০১১ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে দুই লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ঘরহারা হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা আসাদ সরকারের বিদ্রোহ ঘোষণাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহযোগিতা করছে।

অভিযোগ রয়েছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলার নামে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। আর রাশিয়া বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা আসাদ সরকারের সমর্থনে আইএস ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে মার্কিন-রুশ ‘ছায়াযুদ্ধ’ বলেও মনে করছেন অনেকে। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান ও বাংলা ট্রিবিউন

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে