আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে লিবিয়ায় ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের অভিযানের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। ২০১১ সালে পরিচালিত ওই অভিযানে লিবিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি ওই সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডেভিড ক্যামেরনের লিবিয়ায় বিমান হামলার জন্য যুক্তিসঙ্গত কৌশলের অভাব ছিল বলে অভিযোগ করেন। কাউন্সিলটি তার প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ওই সময় ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের যৌথবাহিনীর কাছে ‘নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্য’ ছিল না। এবং ওই সময়ের লিবিয়া অভিযানের ফল হিসেবেই উত্তর আফ্রিকায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের উদ্ভব হয়।
তবে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, লিবিয়ায় গাদ্দাফি শাসনে হস্তক্ষেপ একটি আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, কাজটি করার জন্য আরব লীগই প্রথম আহ্বান জানিয়েছিল এবং এরপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একে অনুমোদন করে।
লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা বেনগাযি শহরে হামলা চালানোর হুমকি দিলে ২০১১ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ-ফরাসি যৌথবাহিনী গাদ্দাফির বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান ও মিসাইল হামলা শুরু করে।
তবে গাদ্দাফিকে উৎখাত করার পর লিবিয়ায় সহিংসতা আর নৈরাজ্য চরম ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গাদ্দাফি বিরোধী সরকারের পাশাপাশি হাজারো বিচ্ছিন্ন মিলিশিয়ার জন্ম হতে থাকে। আর এর মাঝেই জায়গা করে নিতে থাকে আইএস।
বেনগাযিকে সুরক্ষিত করার পর, বিশেষ করে গাদ্দাফির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের যোগাযোগের পর রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের সুযোগ ছিল বলে জানায় পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার সেদিকে না গিয়ে সামরিক সমাধানের ওপরই পুরোটা নির্ভর করেছে।
গত জানুয়ারিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ক্যামেরন বলেছিলেন, গাদ্দাফি ‘বেনগাযির মানুষদের ওপর চড়াও হয়ে উঠছিলেন এবং নিজের জনগণকেই ইঁদুরের মতো গুলি করে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন’। তাই অভিযানটি চালানো খুব জরুরি ছিল।
কিন্তু পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির দাবি, জনগণের ওপর ঝুঁকিটাকে যে বাড়িয়ে দেখা হচ্ছে, তা ব্রিটিশ সরকার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবেদনে জোর দিয়ে আরও বলা হয়, সরকার ‘বেছে বেছে গাদ্দাফির আলঙ্করিক বক্তব্যের কিছু অংশকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে আক্ষরিক অর্থে নিয়েছে’।
কমিটির চেয়ারম্যান ক্রিসপিন ব্লান্ট বিবিসিকে বলেন, ‘লিবিয়ায় ফরাসিদের হস্তক্ষেপের প্রবল আগ্রহের টানে আমরাও ভেসে চলে গিয়েছিলাম এবং বেনগাযির মানুষজনকে বাঁচাতে নেমে পড়েছিলাম, যারা আসলে যতটা বলা হয়েছিল তার তুলনায় সামান্য ঝুঁকিতেও ছিল না।’
এছাড়াও গাদ্দাফি বিরোধী বিদ্রোহী দলগুলোর মধ্যে সুপ্ত মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে সনাক্ত করতেও ব্রিটিশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা।-চ্যানেল আই
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস