বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:২০:০২

১২৫ বছরের রীতি ভেঙে হিলারিকে সমর্থন

১২৫ বছরের রীতি ভেঙে হিলারিকে সমর্থন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১২৫ বছরের রীতি ভঙ্গ করলো যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানপন্থি পত্রিকা ‘আরিজোনা রিপাবলিক’।  পত্রিকাটি ১২৫ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত।  এই দীর্ঘ সময়ে তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে এসেছে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীকে।  কিন্তু এবার প্রথমবার সেই রীতি ভঙ্গ করেছে তারা।

সম্পাদকীয় বোর্ড লিখেছে, ‘২০১৬ সালের রিপাবলিকান প্রার্থী (ডনাল্ড ট্রাম্প) রক্ষণশীল নন। তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা নেই’।  তাই তারা প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীকে (হিলারি ক্লিনটন) সমর্থন দিচ্ছে।  

শুধু তা-ই নয়, হিলারিকে সমর্থন দিয়েছেন মার্কিন সিনেটের ৫ দফা ক্ষমতায় থাকা রিপাবলিকান সাবেক সিনেটর জন ওয়ার্নার।  এখন যে প্রবণতা দাঁড়িয়েছে তাতে মার্কিন পত্রপত্রিকার বেশির ভাগই সমর্থন দিচ্ছে হিলারিকে।  

তাই হয়তো ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম দফা প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পরে ডনাল্ড ট্রাম্প মিডিয়ার সমালোচনা করেছেন।  তিনি মিডিয়াকে দুর্নীতিপরায়ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।  

লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, আরিজোনা রিপাবলিকই শুধু দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙেছে তা নয়।  একই কাজ করেছে দ্য সিনসিনাতি এনকুইরার, ডালাস মর্নিং নিউজসহ আরো বিভিন্ন মিডিয়া।  এসব পত্রপত্রিকা সব সময় রিপাবলিকানদের সমর্থন দিয়েছে।  

কিন্তু ডালাস মর্নিং নিউজ তার ভোটারদের প্রতি আরিজোনা রিপাবলিকের মতোই আহ্বান জানিয়েছে। তারা আহ্বান জানিয়েছে, ডেমোক্রেট প্রার্থীকে ভোট দিন।  দ্য সিনসিনাতি ইনকুইরারও তার ১০০ বছরের মধ্যে এ প্রথা ভেঙেছে।  একই কাজ করেছে দ্য নিউ হ্যাম্পশায়ার ইউনিয়ন লিডার।

এ ছাড়া দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তো আছেই।  এক সময় রিপাবলিকান দলের ‘টাওয়ারিং ফিগার’ বা উঁচু মাপের নেতা ছিলেন সাবেক সিনেটর জন ওয়ার্নার। হলিউডের কিংবদন্তি এলিজাবেথ টেলরের সাবেক স্বামী তিনি।  

তিনিও দলের ঐক্যের বাইরে চলে আসেছেন।  বুধবার তিনি সারাজীবনের রাজনৈতিক বৃত্ত ভেঙে ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।  সমর্থন দিয়েছেন হিলারি ক্লিনটনকে।  

বুধবার তিনি ভার্জিনিয়ার উত্তরাঞ্চলে ডেমোক্রেট দল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম কেইনের এক র‌্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন।  সেখানেই তিনি হিলারির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।  

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে হিলারি ক্লিনটন কতটা প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তা ফুটে উঠেছে এসব সমর্থনের মধ্যদিয়ে।  তা সত্ত্বেও তিনি আগামী ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের ফল ঘরে তুলতে বসে নেই।  

ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইনে সাংবাদিক ডেভিড উসবর্ন লিখেছেন, একইভাবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ লাতিনো ভোটার ট্রাম্পের বিরোধিতা করছেন।  কারণ, তিনি নির্বাচিত হলে প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন।  হুমকি দিয়েছেন মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের।

আরিজোনা রিপাবলিক তার সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ১৮৯০ সালে দ্য আরিজোনা রিপাবলিক প্রকাশিত হওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা রিপাবলিকান প্রার্থীকে রেখে কখনো ডেমোক্রেট প্রার্থীকে সমর্থন দিইনি।  কক্ষণও না।  এটা রক্ষণশীল দর্শনের গভীর দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে।  এটা রিপাবলিকানদেরও মূলনীতি।  তবে এ বছর আমাদের সে অবস্থান ভিন্ন।

এতে আরও বলা হয়েছে, দেশের ভোটাররা কি চায় তা তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ভালো বোঝেন হিলারি।  তাই ওই সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তাতে ক্ষমতায় ধীরস্থির ব্যক্তি, ঠাণ্ডা মাথার মানুষ ও কর্ম সম্পাদনের আগে তা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করার সক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তির প্রয়োজন।  এসবই বোঝেন হিলারি ক্লিনটন।

ডনাল্ড ট্রাম্প নন।  ট্রাম্প তো মার্কিন জনগণকে তার আয়কর রিটার্নই দেখতে দেননি।  হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে পেশাগত ও সংশ্লিষ্টতায় ব্যবধান আছে। মেক্সিকো ও মেক্সিকানদের অপরাধী ও ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ট্রাম্প।

ট্রেডিং পার্টনার ও আরিজোনার মানুষদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অসতর্কতা অবলম্বন করেছেন। তারা সেইসব মানুষকে অবমাননা করছেন যাদের ম্রম ও শক্তিতে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে।

ওদিকে নৌবাহনীর সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন জন ওয়ার্নার (৮৯)।  তিনি বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প।  তিনি কমান্ডার ইন চিফ হওয়ার মোটেও যোগ্য নন।  

তিনি মনে করেন, সেনাবাহিনীর প্রতি তার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধাশীল হিলারি। এমন সমর্থন পেয়ে হিলারি ক্লিনটন নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। তিনি একটি বিবৃতিও দিয়েছেন।  তাতে বলেছেন, আমি জন ওয়ার্নারের সমর্থন পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এমন একজন আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, যেন আমি দায়িত্বশীল একজন কমান্ডার-ইন চিফ হই।

ওদিকে দ্য ডালাস মর্নিং নিউজ তার সম্পাদকীয়তে হিলারিকে অনুমোদন দিয়ে লিখেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে কোনো ডেমোক্রেট প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি এই পত্রিকাটি।  যদি আপনি গণনা করে দেখেন তাহলে এ সময়তা হবে ৭৫ বছরের বেশি।  এর মধ্যে প্রায় ২০টি নির্বাচন হয়ে গেছে। -এমজমিন
২৯ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে