মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:১৩:০১

ভারতকে দাতভাঙ্গা জবাব দিতে নওয়াজের পাশে বিরোধীরা, যেসব সিদ্ধান্ত হল সর্বদলীয় বৈঠকে

ভারতকে দাতভাঙ্গা জবাব দিতে নওয়াজের পাশে বিরোধীরা, যেসব সিদ্ধান্ত হল সর্বদলীয় বৈঠকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: একদিকে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বদলা নেওয়ার জন্য চাপ। অন্যদিকে, সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে চাপ। এই জোড়া চাপের প্রেক্ষাপটেই সোমবার, সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তাতে তাঁকে নিরাশ হতে হয়নি। ভারত বিরোধিতা ও কাশ্মীর ইস্যুতে বিরোধীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেলেন তিনি। নওয়াজ ও তাঁর পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) দলের চরম শত্রু মূল দুই বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং তোহরিক-ই-ইনসাফ সর্বদল বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ভারতের বিরু‌দ্ধে কয়েকটি কড়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

এই প্রথম বহুধা বিভক্ত যুযুধান পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলি জাতীয় স্বার্থে একমত হল৷ সর্বদল বৈঠকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, এরপর ভারত কোনও সামরিক পদক্ষেপ করলে (সার্জিক্যাল অ্যাটাকের মতো) ভারতকে সামরিকভাবেই মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কোনও বিদেশি শক্তির (আমেরিকার) চাপের কাছে কিছুতেই মাথা নত করা হবে না। বালুচিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে (পাক অধিকৃত কাশ্মীরে) ভারতের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবেই ভারতকে নিয়মিতভাবে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। সিন্ধু-সহ বাকি নদীগুলির জলবণ্টন নিয়ে বৈষম্য করলে বা জল-চুক্তি ভাঙা হলে তা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ঘোষণা বা আগ্রাসন হিসাবেই দেখা হবে এবং সেই মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার লড়াইকে সবরকম সমর্থন দিয়ে যাবে পাকিস্তান।

এইদিন বৈঠকে অন্যান্য দলের সাংসদ ও নেতাদের পাকিস্তানের পরিস্থিতি জানান নওয়াজ শরিফ। এবং তাঁদের থেকে পরামর্শও চান।

সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের চাকরির মেয়াদ ফুরোতে চলেছে। তাঁর অবসরের পর ভারতের আগ্রাসন ও পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে পাকিস্তান তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতারা। উল্লেখ্য, দুই দেশেই সংবাদমাধ্যমে ও রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, অবসরের আগে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জবাব দিতে বড় হামলার ছক কষছেন রাহিল শরিফ৷ মরণ কামড় দিতে তৈরি হচ্ছেন তাঁর অনুগত পাক সেনা কর্তারা।

এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর অফিসার কুলভূষণ যাদবের বয়ানই হল পাকিস্তানের কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এর থেকেই প্রমাণ মেলে ভারত কীভাবে বালুচিস্তানে নাশকতা চালাচ্ছে।

বৈঠকে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে,  বহিঃশক্তির আগ্রাসন ও বিপদ রুখতে, জাতীয় স্বার্থে তারা একসঙ্গে লড়াই করবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় কাঠামোর মধ্যে সমাধানের চেষ্টাও করা হবে।

এদিনের ভারত-বিরোধী সরকারি প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়ে সিলমোহর দেয় বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ অনেক দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত নওয়াজের সঙ্গে ব্যক্তিগত রোষ ও রাজনৈতিক কারণে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকায় এদিনের বৈঠকে আসেননি তেহরিক প্রধান ইমরান। তাঁর বদলে বৈঠকে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। পিপিপি-র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রধান তথা বেনজির পুত্র বিলাবল ভুট্টো জারদারি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী শীর্ষ নেতারা।

গতকালের বৈঠকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি), গদর বন্দরের নিরাপত্তা, বালুচিস্তানে ইরানের বর্ডার গার্ডসের গোলবর্ষণ এবং সার্ক সম্মেলন বাতিলের পিছনে ভারতের কৌশল ও চক্রান্ত নিয়ে আলোচনা হয়।

পাকিস্তানকে সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত৷ সেই প্রসঙ্গে ইসলামাবাদের দাবি, সিন্ধু জল চুক্তির পর্যবেক্ষক ও কিষেণগঙ্গা প্রকল্পের অভিভাবক বিশ্বব্যাঙ্ক একটি মীমাংসা আদালত তৈরি করুক যেখানে পাকিস্তানের আপত্তি ও অভিযোগ শোনা হবে৷ তবে ইসলামাবাদের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে নয়াদিল্লি বলেছে, ভারত আন্তর্জাতিক আইন মেনেই প্রকল্পের কাজ করছে৷ ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি মেনেই কাজ চলছে৷ এর পরও পাকিস্তানের আপত্তি থাকলে বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তৈরি কোনও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটি এই বিবাদের ফয়সালা করুক। -সংবাদ প্রতিদিন।
০৪ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে