আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মাঝে ইসলামাবাদের আকাশে মধ্যরাতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ওড়াতে শুরু করেছিল পাকিস্তান। ভারত আঘাত হানলে পাকিস্তান যে মোকাবিলায় প্রস্তুত, তা বোঝাতেই ওই মহড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনীর মোকাবিলায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী কতটুকু প্রস্তুত? পরিসংখ্যানে সব দিক থেকেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর তুলনায় ভারতীয় বিমানবাহিনীকে এগিয়ে রাখছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ৭৫ হাজারের কাছাকাছি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর আকার ঠিক তার দ্বিগুণ। অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার।
বিমানবাহিনীর আকারের প্রশ্নে পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর কোনও উল্লেখযোগ্য র্যাঙ্কিং নেই। ভারতীয় বিমানবাহিনী তার সুবিশাল আকারের কারণে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিমানবাহিনী। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পরেই ভারত।
ফাইটার জেট, অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফ্ট, হেলিকপ্টার এবং ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফ্টের মোট সংখ্যার বিচারেও পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে। পাকিস্তান বাহিনীর মোট এয়ারক্র্যাফ্ট ৯৭৩টি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ারক্র্যাফ্টের সংখ্যা ১৭২৪টি।
এয়ারক্র্যাফ্টের সংখ্যা বিচার করলেও পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কোনও উল্লেখযোগ্য বিশ্ব র্যাঙ্কিং নেই। ভারতীয় বিমানবাহিনী সেই বিচারেও বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর হাতে ফাইটার জেট রয়েছে মাত্র ২৪১টি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ফাইটার জেটের সংখ্যা ৬০৯।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফ্টের সংখ্যা ৮২টি। ভারত সেখানেও বিপুল এগিয়ে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর রয়েছে ২৬৫টি অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফ্ট।
যুদ্ধবিমানের মান এবং দক্ষতার বিচারেও অনেক পিছিয়ে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর হাতে থাকা ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট হল এফ-১৬ (মার্কিন), জেএফ-১৭ থান্ডার (চীনা) এবং মিরাজ-৩ (ফরাসি)। ভারতের হাতে থাকা সুখোই-৩০এমকেআই (রুশ) অনেক উন্নত এফ-১৬ বি মানের চেয়ে। ভারতের মিগ-২৯ (রুশ) এবং তেজস (ভারতীয়) পাকিস্তানের জেএফ-১৭ বিমানকে আকাশে নাস্তানাবুদ করতে পারে নিমেষে। ভারতের মিরাজ-২০০০ (ফরাসি) বিমানের সঙ্গে পকিস্তানের মিরাজ-৩ তুলনাতেই আসে না।
অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফ্টের মানেও অনেক পিছিয়ে পাকিস্তান। পাক বিমানবাহিনীর অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফ্ট হল শুধুমাত্র মিরাজ-৫। ভারতীয় বিমানবাহিনীর রয়েছে মিগ-২৭ এবং জাগুয়ারের মতো বিধ্বংসী অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফ্ট।
তুমুল অর্থসঙ্কটে বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণ করতে পারছে না পাকিস্তান। বহু পুরনো হয়ে যাওয়া মিগ-২১ বিমানের প্রযুক্তিতে তৈরি এফ-৭ পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অন্যতম বড় ভরসা। কিন্তু ওই সব বিমান এখন আকাশে উড়তে গিয়ে যখন তখন ভেঙে পড়ে। ভারতের মিগ-২১ বিমানেও একই সমস্যা কিন্তু ভারত মিগ-২১ বিমানগুলিকে ধাপে ধাপে বসিয়ে দিচ্ছে। পরিবর্তে অনেক শক্তিশালী এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা যুদ্ধবিমান রাফাল আনছে।
নিজের দেশে যুদ্ধবিমান তৈরির ক্ষমতা নেই পাকিস্তানের। টিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা নিম্নমানের জেএফ-১৭ থান্ডার তৈরি করছে। কিন্তু ভারত এখন তেজস-এর মতো শক্তিশালী ফাইটার জেট নিজেই তৈরি করছে। চীনা বিশেষজ্ঞরাও তেজসকে জেএফ-১৭-এর চেয়ে এগিয়ে রাখছেন।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার তেমন শক্তিশালী নয়। কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে ব্রহ্মস-এর মতো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমানঘাঁটির সংখ্যা ১৫১টি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানঘাঁটি ৩৪৬টি।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এখন যা চেহারা, তাতে ভারত-পাক যুদ্ধ হলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পুরো বাহিনী ব্যবহার করার দরকারই নাকি পড়বে না ভারতের। তেমনই দাবি বিশেষজ্ঞদের। প্রতিরক্ষা বিশারদরা বলেন, ভারতের সুখোই-৩০এমকেআই এবং মিরাজ-২০০০-এর দু’টি করে স্কোয়াড্রন ময়দানে নামলেই গুঁড়িয়ে যাবে গোটা পাকিস্তান বিমানবাহিনী।
আকার, সক্ষমতা এবং যুদ্ধাস্ত্রের মান বিচার করলে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর কোনও উল্লেখযোগ্য বিশ্ব নেই। ভারতীয় সেনাবাহিনী কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে পৃথিবীতে সপ্তম। আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরায়েল, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পরেই।
৬ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর