রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:২৯:৪১

কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনা, বাকযুদ্ধ থেকে ফের বন্দুকযুদ্ধ

কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনা, বাকযুদ্ধ থেকে ফের বন্দুকযুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নয়াদিল্লির সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দুই দেশের সম্পর্ক। সীমান্তে সাময়িক উত্তেজনার পর বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই দেশের নেতারা।

কয়েকদিন ধরে চলা হুমকি-ধমকির মধ্যেই বৃহস্পতিবার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নয়াদিল্লি থেকে এক পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। পাল্টা পদক্ষেপে ভারতীয় এক কূটনীতিককেও ফেরত পাঠায় ইসলামাবাদ। পাকিস্তান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্নেরও হুমকি দেয়। তবে সাময়িক বাকযুদ্ধ কাটিয়ে এখন আবার বন্দুকযুদ্ধে মেতে উঠেছে দুই দেশ।

সীমান্তে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী সদস্যেদের নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ শুক্রবার ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কয়েকটি স্থানে গোলাগুলি হয়েছে। এতে বিএসএফ জওয়ানসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত এক সপ্তাহে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ১৫ পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তান তাদের সৈন্য নিহতের কথা অস্বীকার করেছে।

বিএসএফ জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া, পুঞ্চ আর রাজৌরি জেলায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যে সেনা চৌকিগুলো রয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত সেখানে অজস্রবার মর্টার হামলা চালিয়েছে পাক বাহিনী। সেনার দাবি, তার যোগ্য জবাব দিচ্ছে ভারতও।

বিএসএফের অতিরিক্ত ডিজি অরুণ কুমার বলেছেন, ‘২১ অক্টোবর কনস্টেবল গুরনাম সিংহের মৃত্যুর পর থেকেই একের পর এক পাক চেকপোস্টে হামলা চালিয়েছি আমরা। যাতে অন্তত ১৫ জন রেঞ্জার্সের মৃত্যু হয়েছে। ওরা (পাক রেঞ্জার্স) প্রকাশ্যে সেই ক্ষতি দেখাতে ভয় পাচ্ছে। কাল রাতেই ওদের বেশ কয়েকটি ওপি (অবজারভেশন পোস্ট) ধ্বংস করেছে আমাদের বাহিনী।’

বিএসএফের আরও দাবি, গত কয়েকদিন ধরেই নিরাপত্তা বাহিনীর থেকে বেশি সাধারণ মানুষকে নিশানা করছে পাকিস্তান। শনিবার সকালেই কাশ্মীরের পাল্লানওয়ালা সেক্টরের খৌর বেল্টে মর্টার হামলায় মারা যান এক সাধারণ নাগরিক, আহত হন একজন। পুঞ্চের মেন্ধার তহসিলের গোহলাদ গ্রামে মৃত্যু হয় উসমা বি নামে বছর পঞ্চাশের এক মহিলার।

এদিকে শুক্রবার রাতে কুপওয়ারার মছিল সেক্টরের সেনা চেকপোস্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে এক ভারতীয় সেনা জওয়ানের। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ওই সেনার মাথা কেটে দেহ ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে পালায় জঙ্গিরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ওই পাশবিক ঘটনা ঘটিয়েছে পাক জঙ্গিরা। যখন তারা মৃত জওয়ানের মুণ্ডুছেদ করে নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে ওপারে পালাচ্ছিল, তখন পাক সেনা ভারতীয় ছাউনির ওপর উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে গা-ঢাকা দিতে সাহায্য করছিল তাদের। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী।

আরব সাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর রণপ্রস্তুতি:
এদিকে কাশ্মীরের উরি হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আরব সাগরে ব্যাপক নৌ-মহড়া শুরু করছে ভারতীয় নৌবাহিনী। দু’দেশের মধ্যকার উত্তেজনা চলাকালীন সময়ে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বিশেষ এ মহড়ায় ৪টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন, মেরিটাইম ফাইটার জেট, পেট্রল এয়ারক্রাফট, ড্রোনসহ অন্যান্য যুদ্ধ উপকরণ ব্যবহৃত হবে। মহড়ার প্রস্তুতি ও যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরই মধ্যে পশ্চিম সমুদ্রতটে এসব যুদ্ধযান মোতায়েন শুরু করেছে দেশটির নৌবাহিনী।

এদিকে পূর্বদিকের সমুদ্রতট থেকেও আক্রমণ চালানোর জন্য প্রস্তুতি রেখেছে দেশটির নৌবাহিনী। এছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে জরুরি অর্থ তহবিল সৃষ্টিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি যুদ্ধ বাধলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অন্যান্য বিষয়ের জোগানে কাজ করবে।

ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল তার অবসরে যাওয়ার আগে একটি ‘বিশেষ কিছু’ করতে চাইছেন, যার মাধ্যমে দু’দেশে চরম উত্তেজনা ও যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ কারণে আগামী নভেম্বরে অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবেন রাহিল। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে লাইন অব কন্ট্রোল এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান ভারি গোলাবর্ষণ শুরু করেছে বলে ধারণা প্রকাশ করছেন সেনাবহিনীর বিশেষ এক সূত্র। -যুগান্তর।
৩০ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে