আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সংসারে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছিল অভাব-অনটন। বাড়ির কর্তা মৃতেন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা ছোট ব্যবসা করতেন। থাকতেন কুলটির কলেজ মোড়ে ভাড়াবাড়িতে। সেখানে তাঁর স্ত্রী আলোদেবী (৬১), ছেলে সৌরেন্দ্রনাথ (৩৯) এবং মেয়ে কৃতাঞ্জলি (৩৬) থাকতেন। সৌরেন্দ্রনাথ রানীগঞ্জে একটা প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ানের কাজ করেন। বছর দুই আগে ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃতেন্দ্রবাবু মারা যাওয়ার পর থেকেই সংসারের অভাব আরও প্রকট হয়।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সৌরেন্দ্রনাথের বাড়ির দরজা না খোলায় আশপাশের লোকেরা কুলটি থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে ঘরের বিছানায় আলোদেবী এবং কৃতাঞ্জলি পড়ে আছেন। মেঝেতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পড়ে আছেন সৌরেন্দ্রনাথ। তাঁর মুখ দিয়ে তখন গ্যাঁজলা এবং রক্ত বেরোচ্ছিল।
পুলিশ তিনজনকেই উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসকরা আলোদেবী এবং কৃতাঞ্জলিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সৌরেন্দ্রনাথকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাঁর অবস্থাও ভাল নয়। পুলিশ সৌরেন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে দুটি সুইসাইড নোট পেয়েছে। একটি সৌরেন্দ্রনাথ তাঁর কাকিমাকে লিখেছেন। অন্যটি কৃতাঞ্জলি লিখেছেন অরূপ নামে তাঁর এক বন্ধুকে।
দুটি চিঠিতেই তিনি লিখেছেন যে বাড়ির আর্থিক অনটনের জন্যই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সিদ্ধান্তের জন্য তাঁরা সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এ ডি সি পি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘সৌরেন্দ্রনাথ প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার জন্য জানতেন কোন ড্রাগে তাঁদের মৃত্যুটা কম বেদনাদায়ক হবে। তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন ইনসুলিনকে।
মৃত দু’জনের বুকে ইনসুলিন পাওয়া গেছে। সুগারের অসুখ নেই এমন কারও শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় ইনসুলিন ঢুকিয়ে দিলে তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। আলোদেবী এবং কৃতাঞ্জলি দুজনেই এই ইনসুলিনে মারা গেছেন। তবে মা আর বোনকে ইনসুলিন ইঞ্জেক্ট করার পরে বোধ হয় সৌরেন্দ্রনাথের নিজের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন ছিল না।
তাই নিজে ইনসুলিন নেয়ার পরে নিশ্চিত হতে তিনি গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কোনোভাবে গামছার ফাঁস খুলে যাওয়ায় তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। এখন তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।’ তবে কোনোভাবে যদি সৌরেন্দ্রনাথ বেঁচে যান তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে দ্বৈত খুনের মামলা রুজু করতে পারে পুলিশ।-আজকাল
০৬ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ