বুধবার, ০৯ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:০২:২৪

নতুন ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র

রণক ইকরাম ও তানভীর আহমেদ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী হয়ে এ পর্যন্ত যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারা কেউ ছিলেন সেনাপতি, কেউ গভর্নর, কেউ বা ছিলেন সিনেটর বা হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য।

রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই অতীত নেই। তিনি রাজনীতিতে নবাগত এবং আপাদমস্তক ব্যবসায়ী। তাই নির্বাচিত হতে পারলে তিনি ইতিহাস গড়বেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনও নির্বাচিত হলে ইতিহাস গড়বেন, তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। হিলারি সিনেটর ছিলেন, পরে ছিলেন ওবামার প্রথম মেয়াদকালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ নির্বাচনে ইতিহাস ‘হয়েছে’ আর ‘হবে’র যেন ছড়াছড়ি। নির্বাচিত হলে প্রধান দুই দলের প্রার্থী যে ইতিহাস গড়বেন তার জন্য প্রচারণাকালে তারা ইতিহাস গড়েও ফেলেছেন। যেমন তিক্ততাপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন হিলারি ও ট্রাম্প। দেশটির ইতিহাসে এমন তিক্ততাপূর্ণ উত্তেজনাকর প্রচারণা আর দেখা যায়নি। প্রতিপক্ষকে হেয় ও কটাক্ষ করতেও কেউ চুল পরিমাণ ছাড় দেননি। প্রধান দুই প্রার্থীর তিন তিনটি নির্বাচনী বিতর্কেও বিদ্বেষ, তিক্ততা বার বার ফিরে এসেছিল।

এবার নির্বাচনে দুটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন প্রায় ডজনখানেক নেতা। ভোটারদের প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ডেমোক্রেটিক দল হিলারি ক্লিনটনকে এবং রিপাবলিকান দল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রার্থী ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করে ২৭০ বছর আগে ১৭৭৬ সালে। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৪০ বছর ধরে। এই ২৪০ বছরের মধ্যে ১৪৪ বছর কোনো নারী ভোট দিতে পারেননি। নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছেন ১৯২০ সালে।

৯৬ বছর ধরে নারীরা ভোটাধিকার ভোগ করলেও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। হিলারি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হয়ে ইতিহাস গড়েন। ওবামা যখন নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন তখন ইস্যু তোলা হয়, কোনো কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। কিন্তু এসব বিরূপ প্রচার-প্রচারণা মার্কিন ভোটারদের ওবামাকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। নির্বাচিত হয়ে ওবামা ইতিহাস গড়েছেন।

এবারও নতুন ইতিহাস গড়ার দিকেই মার্কিনিদের ঝোঁক। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার পর থেকেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির পাহাড় জমা হয়। নারীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মুসলিমবিদ্বেষ, কর কেলেঙ্কারি নিয়ে কম কথা হয়নি। উল্টোদিকে হিলারিকে মুখোমুখি হতে হয়েছে ই-মেইল কেলেঙ্কারি, আইএসকে সামলাতে না পারা, হোয়াইট হাউসের ভিতরেই স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পরকীয়া কেলেঙ্কারির।

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণাকালে উদ্ভট কথাবার্তা বলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমেরিকায় এখন যারা বঞ্চিত তাদের অসন্তোষ বিভিন্ন সংখ্যালঘু ও দুর্বল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের রাজনীতিতে পুঁজি হিসেবে অনেকে ধর্ম-বর্ণ-জাতিবিদ্বেষ খুঁজে পেলেও তাকে এড়িয়ে যাননি ভোটাররা। শুরু থেকেই এবারের নির্বাচনী প্রচারণা ছিল তিক্ততায় ভরপুর। মুসলিম, হিস্পানিক, কালো এবং নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ নানা বক্তব্য দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মুসলিমদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন। বলেছেন, মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করবেন এবং নির্মাণ ব্যয় মেক্সিকো থেকে আদায় করবেন। এ রকম উদ্ভট কথাবার্তা অতীতে কোনো প্রার্থী বলেননি। তিনি বলেছেন, এটা ইতিহাস। তার গড়া সবচেয়ে উপভোগ্য ইতিহাস, ‘শালিস মানি তবে তাল গাছটি আমার’ প্রবচনের তুল্য। ট্রাম্প বলেছেন, ‘নির্বাচনের ফল যদি আমি জিতি শুধু তখনই মেনে নেব।’ -বিডি প্রতিদিন

৯ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে