আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শেষ হাসি ট্রাম্পেরই। অনেক জরিপের ফল ও বিশ্লেষকদের আভাস উল্টে দিয়ে হোয়াইট হাউসের উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আগামী চার বছর বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকেই বেছে নিল মার্কিন জনগণ। পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হিলারি।
নির্বাচনের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। বিভিন্ন জরিপে হিলারির জয়ের বিষয়টি অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচন যেন ছিল এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাপর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের পক্ষে যে মাত্রার জনসমর্থনের খবর পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, তাতে কেউ দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন পাগলাটে ও শ্বেত জাত্যভিমানী বাক্যবাগীশের কাছে তার পরাজয় ঘটবে।
ন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ান ট্রাম্পের বিজয়কে অভিহিত করেছে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে অসম্ভব রাজনৈতিক বিজয়’ হিসেবে।
তবে শেষ সময়ে সব জরিপ ভুল প্রমাণ করে অবিশ্বাস্য এক জয় পেলেন বিভিন্ন সময় বিতর্কের জন্ম দেয়া রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে ট্রাম্পের এই জয়ে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে করা ৮৫-৯০ পার্সেন্ট জরিপই ভুল প্রমাণিত হল।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিরাট ব্যবধানে হিলারি জয় পাবেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। তবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাশা উল্টে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পাল্লা ভারী হতে থাকে।
সবচেয়ে দোদ্যুলময় ভোটারদের এলাকা ফ্লোরিডা, ওহিও, নর্থ ক্যারোলিনা এবং ইসকনসিনে জয় পেয়ে যান ট্রাম্প।
এখন সবারই প্রশ্ন জনমত জরিপ বিশ্লেষণকারীরা কিভাবে এত বড় ভুল করলেন?
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার সেন্টার ফর পলিটিক্স এর পরিচালক ল্যারি সেবাটো বলেন, আমরা কিভাবে এত বড় ভুল করলাম সেই ধাঁধা থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছি। এই অবস্থাকে বেশ খারাপ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে জরিপ বিশ্লেষকদের এই ভুলের কারণ হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শ্বেতাঙ্গ ভোটকে গণনায় না আনা এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোটের ওপর বেশি নির্ভরতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিলারি-ট্রাম্প নির্বাচনী জরিপ ভুল হওয়ার আরেকটি বড় কারণ ট্রাম্পের লাজুক ভোটার। যারা বিভিন্ন কারণে বিতর্কের জন্ম দেয়া প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার কথা প্রকাশ করতে পারেননি।
তবে ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন দলীয় পক্ষপাতের কারণেই জরিপ ও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ভুল হয়েছে। ট্রাম্পের পরামর্শক ম্যাট কিলেন বলেন, ট্রাম্পের জয়, সব জরিপ ও জরিপ বিশেষজ্ঞদের চমকে দিয়েছে। বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের জরিপ মডেল প্রণয়নে নতুন করে ভাবাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া হিলারির প্রচারণা গ্রুপের পক্ষ থেকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারণা চালানোর ফলেও জরিপে ভুল হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের প্রধান অংশের প্রবল সমর্থন ছিল হিলারির পক্ষে। এমনকি প্রথাগত সাংবাদিকতার তথাকথিত নিরপেক্ষতার নীতি উপেক্ষা করে অধিকাংশ বড় পত্রিকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে।
যেমন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান ঘোষণা করেছিল। সম্পাদকীয় নিবন্ধসহ প্রচুর বিশ্লেষণী লেখায় পত্রিকাগুলো বলেছিল, কেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট করা উচিত হবে না।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের অযোগ্যতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ডজন ডজন যুক্তি তুলে ধরেছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল, ‘হোয়াই ডোনাল্ড ট্রাম্প শুড নট বি প্রেসিডেন্ট’। হাফিংটোন পোস্ট লিখেছিল: ‘টেন রিজনস ট্রাম্প শুড নেভার বি প্রেসিডেন্ট’। একই ধরনের শিরোনামে অজস্র পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা চলেছে।
এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল স্লোগান ছিল ‘উই আর গোয়িং টু মেক আওয়ার কান্ট্রি গ্রেট অ্যাগেইন’। সম্ভবত, এই স্লোগানই আমেরিকার ৭২ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে ট্রাম্পের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। তাদের অধিকাংশের স্বপ্নের ‘গ্রেট আমেরিকা’ হলো শ্বেত জাত্যভিমানী আমেরিকা।
ইউরোপসহ পৃথিবীর দেশে দেশে যে ‘বিশুদ্ধ’ জাত্যভিমান মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে; ধর্মীয়, বর্ণগত, জাতিগত—যাবতীয় রকমের সংকীর্ণতায় মোড়ানো জাতীয়তাবাদের যে বাতাস পৃথিবীব্যাপী বইছে, হ্যামিল্টন-জেফারসনদের মহান দেশ আমেরিকাও যে তার বাইরে নেই, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তির প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে সেটাই প্রমাণিত হলো।
সব জরিপ ভুল প্রমাণ করে অবিশ্বাস্য জয়ে মধ্য দিয়ে আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
৯ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি