সাজেদুল হক : অনুকূল পরিবেশ। মিডিয়ার নিরঙ্কুশ সমর্থন। ইতিহাসের হাতছানি। কোনো কিছুই জেতাতে পারলো না হিলারি ক্লিনটনকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নির্মম পরাজয় বরণ করে নিতে হলো তাকে। কিন্তু কেন? কেন ব্যর্থ হলেন তিনি। চায়ের কাপ থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সবখানেই নানা আলোচনা।
কান পাতলেই শোনা যায় একটি কথা। নিউ ইয়র্ক বা ওয়াশিংটনকে দিয়ে আমেরিকাকে বিচার করা ভুল। বৃহৎ আমেরিকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ এখনো নারীকে সর্বোচ্চ পদে দেখতে আগ্রহী নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন নাগরিক যে এখনো রক্ষণশীল, হিলারির পরাজয়ে সে বিষয়টিও আবার সামনে নিয়ে এসেছে। শুধু নারী প্রার্থী নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের রক্ষণশীলতার প্রকাশ ঘটেছে।
হিলারির পরাজয়ের পেছনে একটি প্রধানতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ওবামার সমর্থকদের কাছে টানতে না পারা। ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, ওহাইয়ো, আইওয়া এই চারটি স্টেটই বারাক ওবামার দখলে ছিল। তার বিজয়ের পেছনে রেখেছিল বড় ভূমিকা। এবার সবক’টিই ট্রাম্প ছিনিয়ে নিলেন। ওই স্টেটগুলোতে মোট ৭৩টি ইলেক্টোরাল ভোট ছিল।
মূলত এই চারটি রাজ্যে জয়ী না হওয়ার কারণেই হিলারির পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। এগুলো জয়ী হতে পারলে তিনি জিততে পারতেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প আফ্রো-আমেরিকান ও লাতিনো ভোটারদের নিয়ে নানা কটু মন্তব্য করেছেন। তারপরও ওবামা যে হারে আফ্রো-আমেরিকান ও লাতিনো ভোটারদের টানতে পেরেছিলেন হিলারি তা পারেননি।
তবে নারীদের ভোট টানার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। নারীদের ৫৪ ভাগ ভোট পেয়েছেন তিনি। ই-মেইল কেলেঙ্কারি হিলারির বিশ্বাসযোগ্যতা মার্কিনিদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নির্বাচনের কিছুদিন এফবিআই প্রধান হিলারির ই-মেইল নিয়ে কংগ্রেসকে চিঠি দিলে বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। তার জনপ্রিয়তাও কমতে থাকে। যদিও শেষ পর্যন্ত এফবিআই জানিয়েছিলো, হিলারির চিঠিতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা আগেই হয়ে গিয়েছিল।
ইতিহাসও ছিল হিলারির বিপক্ষে। মার্কিন ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। সে ইতিহাস তো ছিলই। আরেকটি বিষয়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অতীতে কোনো দলই পর পর তিনবার জয়ী হয়নি। অতীত ইতিহাসের সে ভূত তাড়াতে পারেননি হিলারি ক্লিনটন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের কট্টরপন্থি ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন।
জানান দেন, তিনি প্রথাবিরোধী, প্রতিষ্ঠানবিরোধী। তার এই ভাবমূর্তিই অনেক ভোটারকে টেনেছিল। শুধু হিলারির বিপক্ষে নয়, তারা ভোট দেন প্রাতিষ্ঠানিকতারও বিরুদ্ধে। মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন-ট্রাম্পের সেই স্লোগানেরই জয় হয়েছে। মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল। পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেন তারা। তবে আরেকটি বিষয়ও খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।
ব্রেক্সিট পরবর্তী পৃথিবীতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে কট্টরপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব দল অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেশে দেশে তাদের জয়রথ উড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ব্রেক্সিট প্লাস প্লাস হবে। হয়েছেও তাই। তার অভিবাসী আর মুসলিমবিরোধী নীতিরই যেন জয় হয়েছে। এমজমিন
১০ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এস