আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অনেকেই বলছেন মোদী অচমকা নোট বাতিল করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছেন। এটা ঠিক। কিন্তু এমন কিছু যে করা হবে তা আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। দেশে জমে থাকা কালো টাকার পরিমাণটা জানার পরেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। আর সেটা যে করা হবে সেই নিয়ে বারবার কেন্দ্র তথা প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর পরেও কেন্দ্রের হিসেব না মেলাতেই এত কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
দেশে কত কালো টাকা জমে রয়েছে তার একটা ধারণা পাওয়ার পরেই গত ১ জুন দেশে ‘আয়কর ঘোষণা প্রকল্প’-এর সূচনা করে মোদী সরকার। সেই প্রকল্পে বলা হয়, যাঁরা সম্পত্তি বা অর্থের গোপন সঞ্চয় করেছেন, কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাঁরা চার মাসের মধ্যে তা সরকারকে জানিয়ে দিলে এবং প্রদেয় কর মিটিয়ে দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না সরকার। তাঁদের নামধামও প্রকাশ করা হবে না। আর সেটা না করা হলে বড় পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বারবার এই কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরে গত ১ অক্টোবর একটি হিসেব পেশ করে কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সেই দিন জানিয়েছিলেন, ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি আদায় হয়েছে ওই প্রকল্পে। মোদী সরকার আয়কর ফাঁকি না দিয়ে সৎ হওয়ার যে সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাতে অনেকটাই সাড়া পাওয়া যায়।
যাঁরা কালো টাকা লুকিয়ে রেখেছিলেন, তাঁদের একটা অংশ গোপন সঞ্চয় প্রকাশ্যে আনেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন ৬৪ হাজার ২৭৫ জন। আর তাঁদের প্রকাশ করা সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এঁরা এই টাকার উপরে আয়কর এত দিন ফাঁকি দিয়েছিলেন।
নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছিল এটাই শেষ সুযোগ। ‘আয়কর ঘোষণা প্রকল্প’-এ সাড়া না দিয়ে কালো টাকা জমানো থাকলে তাদের বিপদে পড়তে হবে। করফাঁকি দিয়ে জমানো টাকার হদিশ দেওয়ার জন্য সরকার চার মাস সময় দিয়েছিল। সেই সময়সীমা ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা কালো টাকার পরিমাণ জানাননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তখনই জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
যাঁরা লুকনো অর্থ সামনে আনেন, তাঁদের নামধাম গোপন রাখা হলেও জরিমানা, সেস দিতে হয়েছে। যা ঘোষণাকারীদের ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সুদে-আসলে মিটিয়ে দিতে হবে। এর আগে ২০১৫ সালে অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য এমনই একটি প্রকল্প চালু হয়েছিল। সেই প্রকল্পে কর-ফাঁকি দেওয়া ৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়। অতীতে ১৯৯৭ সালেও মনমোহন সরকার এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করে।
তবে মনে রাখতে হবে, ভারতে যে পরিমাণ কালো টাকা রয়েছে তাতে মনমোহন বা মোদী যে আমলে যত টাকাই উদ্ধার হোক না কেন তা সিন্ধুতে বিন্দু সম। আসল পরিমাণ অনেক বড়। এ বার কেন্দ্র যে পদক্ষেপ করেছে তাতে হয়তো অনেকটা সাফল্য আসবে, কিন্তু দেশকে কালো টাকা মুক্ত করা যাবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাবে। -এবেলা।
১৪ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম