সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:০১:৩৫

ডিসেম্বরের পরে কী কী কঠোর পদক্ষেপ নেবেন মোদী? কারা মুশকিলে পড়বেন?

ডিসেম্বরের পরে কী কী কঠোর পদক্ষেপ নেবেন মোদী? কারা মুশকিলে পড়বেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাতিল করাই শেষ নয়, কালো টাকা খুঁজতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার কী হতে পারে? তা নিয়ে চলছে জল্পনা। চলছে প্রস্তুতি।

দেশের মানুষের দুর্ভোগ চলছে। সাময়িক এই দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘৫০ দিন সময় চেয়েছি। কোনও যদি ভুল হয়, দেশবাসী যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেব। ৫০ দিন সময় দিন, যেমন ভারত আপনারা চান, তেমন ভারত তৈরি করে দেব। দেশবাসীর অসুবিধা বুঝতে পারি, কিন্তু এই পরীক্ষা মাত্র ৫০ দিনের। ৫০ দিন পরে সাফাই হয়ে যাবে।’

গত ৮ নভেম্বর রাতে তাঁর এক ঘোষণাতেই তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল দেশ। এর পরে কালো টাকার কারবারিদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ডিসেম্বরের পরে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছে।
জাপানে অনাবাসী ভারতীয়দের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতা থেকে এখনও পর্যন্ত সব বেহিসেবি আয়ের খরচ পরীক্ষা করে দেখব। যত লোক প্রয়োজন লাগিয়ে দেব। যারা আমায় চেনে, তারা জানে। যাদের হাতে বেহিসেবি টাকা আছে তাদের ব্যাঙ্কে না গিয়ে গঙ্গায় গিয়ে স্নান করা ভাল। পয়সা ফেরত পাও না পাও, পুণ্য তো হবে। সৎ মানুষদের জন্য সরকার সব কিছু করবে। কিন্তু বেইমানদের সরকার ছাড়বে না।’

কিন্তু কী করবেন তিনি? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক কর্তার বক্তব্য, এর পরেও অনেক পন্থা নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কালো টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অনেক সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ কালো টাকার মালিক সেই সুযোগ নেয়নি। এবারে তাই বাধ্য হয়েই সরকারকে এমন কড়া পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।’ উল্লেখ্য কালো টাকা জমা দিলে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে আগেই ১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর চার মাসের সময় দিয়েছিল কেন্দ্র। তখনই কালো টাকা উদ্ধারে আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এখন ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্র। তার পরেও যাঁরা কালো টাকা গোপন করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে আরও কিছু আসবে না তার কোনও গ্যারান্টি নেই বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই কর্তা বলেন, ‘কেন্দ্র দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ব্যাঙ্কমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছে। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির টাকা, একশ দিনের কাজের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা দেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্র। তাতেও যাঁরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলেননি, আশা করা যায় তাঁরা এখন খুলছেন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যাবে। এর পরেই কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।’

ইতিমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনলাইন ব্যাঙ্কিং-এ জোর দিতে বলেছে দেশের সব ব্যাঙ্ককে। এর ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে, ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, পেটিএম ব্যবহার বেড়েছে। সোনার বন্ড চালু করার পরে কাগজের মাধ্যমে সোনা কেনার প্রবণতাও বেড়েছে। এইসব নজির উল্লেখ করে ওই ব্যাঙ্ক কর্তা বলেন, ‘আর্থিক সংস্কারে আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ করবেন। আর তাতে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সুবিধাই হবে।’

কী কী হতে পারে? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই কর্তা বলেন, ‘সেটা বলার সময় এখনও আসেনি তবে, ব্যাঙ্ক নির্ভর লেনদেনে বাধ্য করা হবে অনেক ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যেই বেশি পরিমাণে সোনা কেনার ক্ষেত্রে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক হয়েছে। আগামী দিনে যে কোনও কেনাকাটার ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্ক নির্ভরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কমবে নগদ লেনদেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধরা যাক, পাঁচ হাজার বা অন্য কোনও পরিমাণ টাকার উপরে লেনদেনের ক্ষেত্রে নগদ বিনিময় বন্ধ করা হল। এতে গরিব মানুষের যেমন অসুবিধা হবে না, তেমনই খুচরো বা মাঝারি বিক্রেতাদেরও সমস্যা হবে না। শহরাঞ্চলে ইতিমধ্যেই বড় দোকানে অনলাইন বা কার্ড পেমেন্ট চালু রয়েছে। অনেক ছোট দোকানেও পেটিএম চালু। আগামী দিনে হয়তো সব ব্যবসায়ীকেই এইভাবে লেনদেন করতে হবে।’

আরও মারাত্মক কিছু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যাঙ্ককর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এখনও অনেকে নিজের নামে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আড়াই লাখ টাকার বেশি করে জমা দিচ্ছেন। এঁদের বিরুদ্ধে ডিসেম্বরের পরেই ব্যবস্থা নিতে পারে আয়কর বিভাগ। এছাড়াও যেসব অ্যাকাউন্টে খুবই সামান্য টাকা জমা থাকে সেখানে আচমকা বেশি টাকা জমা যাঁরা দেবেন তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারে মোদী সরকার। নিজের হিসাব বহির্ভূত অর্থ যাঁরা পরিবার বা অন্য কারও অ্যাকাউন্টে জমা করবেন তাঁরাও মুশকিলে পড়তে পারেন। আবার যাঁদের অ্যাকাউন্ট জমা পড়ছে তাঁদের কাছেও এই টাকা জমা বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এখন সব লেনদেনের উপরেই নজর রাখা হচ্ছে।-এবেলা
১৪ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে