আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হিলারিকে হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে তিন লাখ অপরাধীকে বহিষ্কার করতে পারবেন নব নির্বাচিত মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। প্রায় এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে অপরাধের রেকর্ড রয়েছে আট লাখ ২০ হাজার মানুষের। এদের মধ্যে 'গুরুতর অপরাধী' তিন লাখ।
গুরুতর অপরাধে জড়িত ২০ থেকে ৩০ লাখ উল্লেখ করে তাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর রিপাবলিকান ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে গণহারে নির্বাসনে পাঠানো ট্রাম্পের অগ্রাধিকার হতে পারে না।
তিনি বলেন, "এটা আমাদের ফোকাস নয়; অভিবাসন ইস্যুর চেয়ে বরং এর আগে আমাদের সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। আমরা বলপূর্বক লোকজনকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা করছি না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কোনো পরিকল্পনা করছেন না।"
একইদিন, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা রিপাবলিকান কেভিন ম্যাকার্থিও অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর চেয়ে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ম্যাকার্থি বলেন, "একটি সাধারণ বিষয়ের ওপর সবাই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তা হলো সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি ট্রাম্প ব্যবস্থা নেবেন।" অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা দলনিরপেক্ষ সংগঠন মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট। সংগঠনটির পরিচালক মুজাফফর চিশতী তাঁর সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে আট লাখ ২০ হাজার মানুষ অপরাধমূলক কাজে জড়িত। এদের মধ্যে গুরুতর অপরাধে জড়িত মাত্র তিন লাখ অভিবাসী।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা মুজাফফর চিশতী দাবি করেন, ট্রাম্প যখন ২০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর অপরাধী হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তখন তিনি এ সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই বলেছেন। চিশতী জানান, ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, অপরাধী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯ লাখ অভিবাসী বহিষ্কারের আওতায় রয়েছেন। তবে সেখানে বৈধ-অবৈধ দুই ধারার অভিবাসীই রয়েছেন। ট্রাম্প তাহলে ৩০ লাখ অভিবাসী তাড়াতে চাইলেন কী করে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে ওবামা প্রশাসনের অভিবাসন নীতির দিকে দৃষ্টি ফেরাতে হয়।
নথিবদ্ধ প্রমাণ অনুযায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার দুই মেয়াদের প্রথম ছয় বছরে ২৫ লাখ অভিবাসীকে তাড়িয়েছিলেন। ট্রাম্পের মতো তিনিও কেবল গুরুতর অপরাধীদের বিতাড়িত করার কথা বলে নিরাপরাধ বহু সংখ্যক অভিবাসীকে তাড়িয়েছিলেন। তিনিও ট্রাম্পের মতোই একই সুর তুলেছিলেন। বলেছিলেন অপরাধী, সংঘবদ্ধ চক্র এবং আমেরিকান সম্প্রদায়কে আঘাতকারী যারা, সেই তাদের বিতাড়িত করবেন। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস'র এক অনুসন্ধান বলছে, তাড়িয়ে দেওয়া ২৫ লাখ অভিবাসীর দুই তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধেই তেমন কোনো গুরুতর অপরাধের রেকর্ড ছিল না। আর ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টম ম্যানেজমেন্ট আইসিই'র নথি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, ২০১৪ সালে তাড়িয়ে দেওয়া অভিবাসীদের ৪৩.৫ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের রেকর্ডই নেই। মাত্র ৬.৭৩ শতাংশ আইনের চোখে দোষী বলে প্রমাণ মিলেছে।
১৯ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর