সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩১:১১

সীমান্তে কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রাণ বাঁচাতে আসছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো

সীমান্তে কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রাণ বাঁচাতে আসছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো

নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারা অভিযোগ করছেন, রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন এবং ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে।

যদিও বাংলাদেশের সরকার বলছে, সীমান্তে কঠোর নজরদারি চলছে, কিন্তু সীমান্ত এলাকা ঘুরে এসে জানাচ্ছেন, কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিপন্ন রোহিঙ্গারা রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন।

তিনি টেকনাফের কুতুপালং এলাকায় মোজিনা খাতুন নামে একজন রোহিঙ্গা নারীর সাথে কথা বলেছেন যিনি অভিযোগ করছেন যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

মজিনা খাতুন জানাচ্ছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে। পুরুষদের ধরে ধরে হয় গুলি করা হচ্ছে, নয়তো গলা কেটে ফেলা হচ্ছে। তার মতই আরো বহু নারী এখন স্বামীহারা।

''তারা আমাদের বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে ফেলছে। প্রাণ বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে আমরা তাই সীমান্ত অতিক্রম করে এখানে এসেছি।"

রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাব সত্ত্বেও সীমান্তের ওপারে চরম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে পড়া মানুষদের প্রতি বাংলাদেশিদের সহানুভূতি বাড়ছে বলে বিবিসির সংবাদদাতার মনে হয়েছে। তবে মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের দাবি বরাবরই 'অতিরঞ্জিত' বলে বর্ণনা করে থাকে।

বর্মী সরকারের একজন মুখপাত্র য থে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আসলে রাখাইনে যা ঘটছে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতেও ফুটে উঠছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ বলছে, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে ১২শরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত অন্তত ৭০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তারা নিহতদের সহিংস হামলাকারী ও 'বাঙালী' বলে বর্ণনা করছে।

রাখাইন প্রদেশে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে সেনাবাহিনী উল্লেখ করছে।

অবশ্য সেখান থেকে রোহিঙ্গা সূত্রগুলো বলছে, সেনাবাহিনী সেখানে বেসামরিক অধিবাসীদেরকে হত্যার পাশাপাশি ধর্ষণও করেছে এবং গ্রামের পর গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। গত ৯ই অক্টোবর রাখাইনে সীমান্ত চৌকিতে হামলার জের ধরে এই অভিযান শুরু।

ওই এলাকায় সেনাবাহিনী এমনকি হেলিকপ্টার গানশিপও ব্যবহার করে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা এএফপি। ওদিকে ইয়াংগন থেকে বিবিসির মিয়ানমার বিভাগের সাংবাদিক খাইন ম্রাত চ্যয় জানাচ্ছেন, রাখাইন প্রদেশের অবস্থা এখনও বেশ উত্তপ্ত।

তিনি জানান, গতকালই দুটি ভিন্ন জায়গা থেকে মোট ৮৭ জন রোহিঙ্গা মুসলমানকে আটক করা হয়েছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে, বিশেষভাবে মংডু শহর ও তার আশেপাশের এলাকায়, কোন সাংবাদিককে যেতে দিচ্ছে না। ফলে নির্যাতনসহ অন্যান্য অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসি বাংলা

২১ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে