নিউজ ডেস্ক : সম্প্রতি মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে দেশটির সরকারি বাহিনী। জীবন বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসছে এখন বাংলাদেশ সীমান্তে। মাথায় একটাই চিন্তা; কিভাবে নরককুণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা যায়?
সেই নরককুণ্ড থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধা ছফুরা বেগম (৬২)। তিনি বলেন, মিয়ানমারের আগের (জান্তা সরকার) সরকারের সময়ও অত্যাচার ছিল। তবে এবারের মতো এত ভয়াবহতা আর কখনও দেখিনি।
ঘটনার বিবারণ দিয়ে গিয়ে আঁতকে উঠেন তিনি। বলেন, হঠাৎ করেই সেনাবাহিনী একেকটি গ্রাম ঘিরে ফেলে। একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পালানোর সময় মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। মেয়েদের ধরে ধরে নির্যাতন করেই চলছে। এদের (সেনাবাহিনীর) হাতে মরতে চাই না। মৃত্যু হলে বাংলাদেশে মুসলিমদের হাতেই হোক। এখানে (বাংলাদেশে) অন্তত জানাজার পড়ার মানুষ তো পাবো!’
তিনি জানান, পাঁচ ছেলে এক মেয়ে আছে তার। স্বামী মারা গেছেন সাত বছর আগে। মিয়ানমারের নাগরিকতার স্বীকৃতি না পেলেও আরও অনেকের মতো ভালোই চলছিল তার সংসার। প্রায় এক সপ্তাহ আগে ওই সংসারে নেমে আসে কালো ছায়া। ওইদিন দুপুরে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর একটি দল বাড়িতে ঢুকে তার একমাত্র মেয়েকে নির্যাতন করে।
পরে বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। চলে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী তার দুই ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা আর বাড়ি ফিরে আসেনি। কোনও উপায় না দেখে অন্যান্যদের মতো বাংলাদেশে চলে আসার সিন্ধান্ত নেন, জানিয়ে কেঁদে ফেলেন ছফুরা। তিনি জানান, ‘তিনি তার তিন ছেলে ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।’
দেশ ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে বাংলাদেশে আসা ছফুরা বেগম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে বাড়ি ছেড়ে বের হই। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে লুকিয়ে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছি।’
ছফুরা বেগমের বাড়ি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার কেয়ারিপাড়া গ্রামে। ওই গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন তিনি। দুদিন আগে আশ্রয় নিয়েছেন উখিয়া উপজেলার কুতুপালং আন-রেজিস্টার্ড শরণার্থী ক্যাম্পে।
২৫ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি