আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২৬/১১ মুম্বাই হামলা। তারিখটা বোধহয় কোনওদিন ভুলতে পারবে না গোটা ভারত। আট বছর আগে এমনই এক দিনে ভারতবাসী ভয়াল আতঙ্কে দেখেছিল কী ভাবে ১০ পাকিস্তানি তরুণ নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে মুম্বাইয়ে। খবর ইন্ডিয়াটাইমসের।
ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, তাজ মহল প্যালেস থেকে নরিম্যান হাউস, লিওপোল্ড কাফে থেকে কামা হাসপাতাল। রক্তের স্রোতে ভাসে গোটা মুম্বাই। সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি ভারতীয়দের হৃদয় থেকে।
তারপর আট বছর কেটে গিয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলেছে মুম্বাই হামলার একমাত্র ধৃত জঙ্গি আজমল কাসভ। কিন্তু স্মৃতিতে আজও দগদগে মুম্বাই হামলার ক্ষত। বিশেষ করে তাদের কাছে, যারা নিকট কাউকে হারিয়েছেন এই হামলায়। এমনই একজন সারজান শাহ।
হামলার সময় ওবেরয় গ্র্যান্ডে ছিলেন সারজানের বাবা ব্যবসায়ী পঙ্কজ শাহ। কাসভদের গুলি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় তাকে। আট বছর পেরিয়ে এলেও ক্যালেন্ডারে ২৬/১১-র তারিখ এলে আজও শিউরে ওঠেন তিনি। তার সেই ভয়াবহ স্মৃতিকথা শোনাতে নিজেই কলম ধরলেন সরজন।
"মুম্বাই হামলার পর কেটেছে ২,৯২০ দিন। প্রায় এই তিন হাজার দিনের একটিও এমন মুহূর্ত আমি কাটাইনি, যখন মুম্বাই হামলার আতঙ্ক আমায় তাড়া করেনি। কাসভদের হামলা আমাদের কাছে গোটা পরিবারের মূল স্তম্ভটাকেই কেড়ে নেয়। কাঁপিয়ে দেয় গোটা পরিবারের ভিত। ২০০৮ থেকে ২০১৪। এই সময়টা একটা প্রচণ্ড রাগ আমার মনের মধ্যে কাজ করেছে। এত মানুষ মারা গেল, এত পরিবার শেষ হয়ে গেল। কোথাও তার কোনও সুবিচার হল না। তবে গত ২ বছরে মনে হচ্ছে পরিস্থিতিতে যেন কিছুটা বদল আসছে।
কাসভদের হামলায় যখন বাবা মারা যান, তখন আমার বোনের মাত্র ১৩ বছর বয়স। আমি আর মা আপ্রাণ চেষ্টা করতাম, ওকে এই আতঙ্ক থেকে দূরে রাখতে। কিন্তু ও সবই বুঝতে পারত। এই ঘটনার পর ও যেন খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল। আমার ইচ্ছে করে বোনকে ওর হারানো টিনএজ ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু জানি তা হওয়ার নয়।
আট বছর আগে তখন আমার ছিল ১৯ বছর বয়স। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকসের একজন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্র। এই ঘটনার পর অনেকেই আমাকে বলেছিলেন লেখাপড়ে বন্ধ করে বাবার ব্যবসার হাল ধরতে। কিন্তু আমার মা অসম্ভব মানসিক জোর দেখিয়ে আমার লেখাপড়া শেষ করান। এলএসই, হার্ভার্ড ও কেমব্রিজ থেকে ডিগ্রি নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। কিন্তু নিজের ইচ্ছেমতো কেরিয়ার না বেছে বাবার ব্যবসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিই। আজ বাবা বেঁচে থাকলে যা হয়তো আমাকে করতে হত না।
এই আট বছরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আমার মা-এর। তিনি পিলারের মতো আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত শোক সামলে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছেন। তাঁর জীবনে যে চূড়ান্ত ক্ষতি হয়েছে, তার আভাস তিনি আমাদের পেতে দেননি।"
২৬ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি