বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:১১:২২

পাত্রের দাম ১১ লক্ষ টাকা, পাত্রীর মৃত্যু

পাত্রের দাম ১১ লক্ষ টাকা, পাত্রীর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছেলের দাম কত? অভিযোগপত্র জানাচ্ছে, নববিবাহিতাকে শাশুড়ি বলেছিল, ‘তোমার বাবা-মা কী এমন দিয়েছে? আমার ছেলে যতটা শিক্ষিত, সেই হিসেবে একটা গাড়ি, একটা আইফোন আর ১০ লক্ষ টাকা নগদ দিতেই পারত।’
যদিও পাত্রী কাজল বর্মণের পরিবারের তরফে পাত্র লিঙ্কন দাসকে তার আগেই দেওয়া হয়েছে, লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র, টিভি সেট, রেফ্রিজারেটর, হিরের আংটি, সোনার গয়না এবং এক লক্ষ টাকা!

তবু মন ভরেনি। পাত্র বহুজাতিক সংস্থার কর্মী বলে কথা! দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া চলছিলই।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে ভারতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ২৭ বছর বয়সি কাজলের। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পণের দাবিতে অত্যাচার, সেকারণে মৃত্যু এবং যৌথভাবে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে লিঙ্কন, তার মা কৃষ্ণা এবং বাবা নারায়ণকে। মঙ্গলবার বারাসত আদালতে তোলা হলে অভিযুক্তদের চারদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

সোদপুরের পিয়ারলেস নগরের বাসিন্দা কাজলের সঙ্গে বাগুইআটির অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা লিঙ্কনের বিয়ে হয়েছিল গত ১৩ ডিসেম্বর। যোগাযোগ হয়েছিল একটি ‘ম্যাট্রিমোনিয়াল ওয়েবসাইটে’র মাধ্যমে। কাজলের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বিয়ের দিনেই লিঙ্কনদের দেওয়া হয়েছিল আসবাবপত্র, সোনা, আংটি এবং নগদ টাকা। কাজলের দাদা তপনের অভিযোগ, গত ১৬ ডিসেম্বর আচমকাই লিঙ্কন এবং তার বাবা-মা আরও ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। এমনকী, প্রতিবাদ করায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে মার খেতে হয় কাজলকে।

থানায় দায়ের করা তপনের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, গত ১৬ ডিসেম্বর তাঁকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে সব কথা জানান কাজল। তপন এবং তাঁর পরিবারের কয়েকজন
সদস্য অশ্বিনীনগরে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে লিঙ্কন এবং তার বাবা-মা’কে তাঁরা অনুরোধ করেন, বোনের উপর অত্যাচার না করতে। এমনকী, কয়েকদিন পর তাদের বাকি চাহিদা মেটানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তপন। পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিনও কাজলকে মারধর করে লিঙ্কনেরা। কাজলকে তাঁর পিতৃকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেও নিষেধ করা হয়েছিল।

তপন জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁকে ফোন করে লিঙ্কন। তাঁর কথায়, ‘‘ফোনে লিঙ্কন জানায়, বোন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। কিন্তু কোনও কারণ বলেনি। আমি আধঘণ্টার মধ্যে জোড়ামন্দিরে একটা হাসপাতালে গিয়ে দেখি, বোন আর নেই।’’ তারপর গভীর রাতে বাগুইআটি থানায় লিঙ্কন এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তপন।

মঙ্গলবার আর জি কর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর কাজলের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিকভাবে কাজলের দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। যদিও তপনের দাবি, বোনের থুতনি এবং চোখের নীচে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তিনি।

বিধাননগর সিটি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়। পণের জন্য অত্যাচার, সেকারণে মৃত্যু এবং যৌথভাবে অপরাধ সংগঠনের ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক জেরায় অভিযুক্তেরা দাবি করেছে, সোমবার সন্ধ্যায় কাজল গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

 তবে এ প্রশ্নও উঠেছে, তপনেরা কেনই বা বোনের বিয়েতে অত টাকা এবং সোনা-হিরে দিয়েছিলেন? বোনের উপর অত্যাচার হচ্ছে জেনেও কেনই বা পাত্রপক্ষকে বোঝাতে গিয়েছিলেন? বাড়ি নিয়ে আসেননি কেন? তপনের জবাব, ‘‘আমরা ঠিক করেছিলাম, বোনকে সোনা-গয়নায় ভরিয়ে বিয়ে দেব। আর সত্যিই ওকে নিয়ে আসার কথা ভাবিনি। সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে। বোনটা যাতে সংসার করতে পারে, সেই চেষ্টাই করেছিলাম।’’ ফল? একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। নাকি একটি মেয়ের মূল্য?  -এবেলা।
২১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে