আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৩ ডিসেম্বর ও যে টাকা তুলতে গিয়েই এভাবে চলে যাবে, ভাবতে পারিনি। এ-ও ভাবতে পারিনি, এটিএমের সামনে যখন ও মাটিতে পড়ে গেল, চারপাশের কেউ এগিয়ে আসবে না। মানুষটাকে কেউ ধরেনি পর্যন্ত। মাটিতে ওভাবে কতক্ষণ যে পড়ে ছিল!
দিন দশেক আগেই চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফর্ম পূরণ করেছি। ওর (স্বামী কল্লোল রায়চৌধুরী) অফিসের কয়েকজন সহকর্মী এসেছিলেন ফর্ম নিয়ে। এসবের হয়তো দরকারই হতো না, যদি পর্যাপ্ত জোগান রেখে পুরনো নোট বাতিল করা হতো।
প্রধানমন্ত্রী ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার পর আমার স্বামী অনেকবার চেষ্টা করেছিল টাকা তোলার। যেহেতু এটিএম থেকেই টাকা তুলত, তাই চেক বইয়ের দরকার হয়নি কখনও। কিন্তু এটিএমে লাইন দিয়েও প্রয়োজনীয় টাকা পাচ্ছিল না। তাই কোচবিহারে যে ব্যাঙ্কে ওর স্যালারি অ্যাকাউন্ট ছিল, সেখানে গিয়েছিল চেক বই আনতে। কিন্তু সেটাও পায়নি।
টাকা তুলতে না পেরে অনেকের কাছে ধারও করে ফেলেছিল। তাই খুব উদ্বেগে ভুগছিল মানুষটা। এটিএম দেখতে পেলেই একবার খোঁজ নিত, টাকা আছে কি না! তবে ৩ ডিসেম্বর ও যে টাকা তুলতে গিয়েই এভাবে চলে যাবে, ভাবতে পারিনি। এ-ও ভাবতে পারিনি, এটিএমের সামনে যখন ও মাটিতে পড়ে গেল, চারপাশের কেউ এগিয়ে আসবে না। মানুষটাকে কেউ ধরেনি পর্যন্ত। মাটিতে ওভাবে কতক্ষণ যে পড়ে ছিল!
ওর মৃত্যুর পর বাড়ি থেকে আর বেরোই না। সংসার চালাতে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার জন্য একদিনই বেরিয়েছিলাম। টিভিও দেখি না। আমার এখন লক্ষ্য ছেলেটাকে মানুষ করা। ওঁর সহকর্মীরা আমাকে অবশ্য খুব সাহায্য করছেন। এখন রাজ্য সরকারের দেওয়া চাকরিটা কবে হয়, সেটাই দেখার।
তবে একপ্রকার বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকেই চাকরিটা করব। আগে বিমা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতাম। ছেলে হওয়ার পর সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন কী আর করব? ছেলেকে মানুষ করতে আমাকেই সব কিছু করতে হবে। তবে একটা চিন্তা হচ্ছে। ছেলের স্কুল ছুটি হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। বাড়ি আসে সাড়ে ৫টা নাগাদ। পুলকারে যাতায়াত করলেও বাড়িতে কেউ না থাকলে কিছুটা তো সমস্যা হবেই। আমরা থাকি বেহালায়। কাছাকাছি কর্মস্থল হলে হয়তো সেভাবে সমস্যা হবে না। দেখা যাক!
দেখুন, আমি রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু মানুষের যে হয়রানি হল, তার দায় কে নেবে? আমাদের জন্য রাজ্য সরকারের ক্রেতাসুরক্ষা দফতর থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে শুনেছি। কথাটা যুক্তিসঙ্গত। ক্ষতিপূরণ তো দেওয়াই উচিত। এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল! তবে ক্ষতি কি সত্যিই পূরণ হয়? মানুষটা তো আর ফিরবে না।-এবেলা
২৭ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ