আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি ইসরায়েলের বসতি স্থাপন বিরোধী প্রস্তাব পাসের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। দেশটি বলছে, নিরাপত্তা পরিষদে তেল আবিবের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপনের পেছনে ওয়াশিংটনই কলকাঠি নেড়েছে। ইসরায়েলের কাছে এর ‘প্রমাণ’ রয়েছে এবং নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তারা এটি তুলে ধরবে।
২০১৬ সালের মার্চ থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন ডেভিড কেয়িস। রবিবার ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, অন্যদের মতো আরব সূত্রগুলো ইসরায়েলকে জাতিসংঘের প্রস্তাবের ব্যাপারে ওবামার সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু’র মুখপাত্র ডেভিড কেয়িস বলেন, ‘আরব দুনিয়া এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়; উভয় দিক থেকেই আমরা অকাট্য তথ্য পেয়েছি যে, এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছাকৃত আক্রমণ। প্রকৃতপক্ষে তারা এই প্রস্তাব তৈরিতে সহায়তা করেছিল।’
ডেভিড কেয়িস-এর এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা আগেই একই রকমের দাবি করেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন ডারমার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে রন ডারমার বলেন, ‘নতুন প্রশাসনের (ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন) কাছে আমরা যথাযথ মাধ্যমে এ প্রমাণ তুলে ধরবো। তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে এটি জানাতে চায়; তাকে আমরা স্বাগত জানাবো।’
রন ডারমার দাবি করেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাটভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায়নি; শুধু এটাই নয়। তারা জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দলবাজির নেপথ্যে ছিল।’
এদিকে সোমবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে জাতিসংঘের প্রতি নিজের অসন্তুষ্টির কথা জানান নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু লোকজনের একত্রিত হওয়া, কথাবার্তা বলা এবং ভালো সময় কাটানোর একটি ক্লাব মাত্র।’
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন ডারমার’কে ওয়াশিংটনে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়। বারাক ওবামা প্রশাসনের অভিযোগ, তিনি আন্তর্জতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করতে মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য দিতে নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর সঙ্গে তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন, সেটাও তার প্রটোকলের গুরুতর লঙ্ঘন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র ডেভিড কেয়িস এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত রন ডারমার দুজনই অস্পষ্ট সূত্র থেকে প্রমাণ তুলে ধরার কথা বলেছেন।
গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে ওয়াশিংটন। ইরানের পরমাণু ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচনার সময়ে এমন অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে একজন বলেছিলেন, ‘একটা বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরস্পরের সঙ্গে গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি চুরি করছে এবং এটি ব্যবহার করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দিয়ে মার্কিন কূটনীতির ভিত দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে।’
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন ডারমার যেভাবে ট্রাম্পের হাতে তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন সেটা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই উদ্ধৃতির সত্যতাকেই নির্দেশ করে।
ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ আসন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের কাছে প্রকাশ্যে একজন বিদ্যমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এভাবে ‘প্রমাণ’ হাজির করার হুঁশিয়ারি নজিরবিহীন বলেই প্রতীয়মান হয়। এটা দৃশ্যত একটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অত্যন্ত দলীয় কৌশল।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র দিক থেকে রিপাবলিকান পার্টি থেকে নবনির্বাচিত এমন একজনের সঙ্গে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ বন্ধন গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যার সম্পর্কে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। যার রাষ্ট্র পরিচালনার কোনও অতীত অভিজ্ঞতা নেই। নিজ দলের প্রার্থী হতেও যাকে বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যেসব দাবি তোলা হচ্ছে কঠোর ভাষায় তা প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বারাক ওবামা’র উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডিস।
বেন রোডিস বলেন, ‘আমরা এই প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করিনি। আমরা এই প্রস্তাব উপস্থাপন করিনি। এটা যখন ভোটাভুটির জন্য আসলো তখনই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু বসতি স্থাপনের বিরোধিতা এবং এটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এই অঞ্চলের জন্য এটা আরও খারাপ হতে পারে। এখানে ভেটো দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিবেচকের কাজ হতো না।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম