আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে বিদায়ী ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হচ্ছে দিনকে দিন। এই বাস্তবতায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে উত্থাপিত জাতিসংঘ-প্রস্তাব সমর্থনের পর এবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরতে যাচ্ছে ওবামা প্রশাসন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসবে সেই রূপরেখা। পরে ১৫ তারিখ প্যারিসে শুরু হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এক শীর্ষ সম্মেলনে সেই রূপরেখার পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ওবামা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান একেবারেই পরস্পরের বিপরীত। ওবামা প্রশাসন চায় দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই ওবামা প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান। বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির বিরোধী। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা এবং ইসরায়েলে একজন কট্টরপন্থী রাষ্ট্রদূত নিয়োগের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আদতে আগ্রাসী জায়নবাদী প্রকল্পকেই সমর্থন দিয়ে আসছেন।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চায় ওবামা প্রশাসন। এজন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তুলে ধরবে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ বন্ধে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল যে বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে, তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই।’ নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা পাশ হয়। ভোট দান থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে অতীতে তারা ইসরায়েলবিরোধী প্রস্তাবগুলোতে ভেটো দিতো।
এই প্রস্তাব পাশের পর থেকে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। ইসরায়েল ওই প্রস্তাবে ভেটো না দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে বুধবার জন কেরি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তুলে ধরতে যাচ্ছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, পররাষ্ট্র দফতরে দেওয়া কেরির ওই ভাষণে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়ায় ওবামা প্রশাসনের আস্থার বিষয়টি আরও প্রকট হবে। আট বছরের ওবামা প্রশাসনে ইসরায়েলের বিষয়ে এতো শক্ত অবস্থান এর আগে দেখা যায়নি।
ইসরায়েলের চ্যানেল ২ টেলিভিশনকে মার্কিন সহকারি নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস বলেন, ‘সংঘাত বন্ধের প্রশ্নে আমাদের কি করণীয়, আর বিষয়টিকে আমরা কিভাবে দেখি, এসব বিষয় উঠে আসবে কেরির বক্তব্যে। ২০১৬ সালে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমাদের মেয়াদ শেষেও শান্তি প্রক্রিয়ায় কেন তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি, এসব নিয়ে কথা বলবেন কেরি।’
এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানতে পেরেছে, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র পাঁচ দিন আগে ১৫ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে কেরি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তুলে ধরবেন। গার্ডিয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী কেরির বুধবারের ভাষণে এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলবে।
এদিকে, সোমবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-কে এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রী পরিষদ আশঙ্কা করছে, জানুয়ারির ১৫ তারিখ প্যারিসে শুরু হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিতে পারেন।
প্যারিস শীর্ষ সম্মেলনে কেরির অংশগ্রহণে শঙ্কিত নেতানিয়াহু। কেরির প্রস্তাব গ্রহণ হলে ওবামা প্রশাসন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আসতে পারে। আর তা সমন্বয় করা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
জাতিসংঘে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাবকে উদ্ধৃত করে নেতানিয়াহু রবিবার মন্ত্রী পরিষদের এক সভায় বলেন, ‘তারা আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চায়।’ তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, মার্কিন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হয়ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও নিরাপত্তা পরিষদে পাশ করিয়ে নিতে পারেন। আর এর বিরুদ্ধে ‘বল প্রয়োগের’ হুমকিও দেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম