আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে মরণ কামড়টা দিয়েই যেতে চান বারাক ওবামা৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগে এবার রাশিয়াকে উচিত শিক্ষা দিতে চাইছে আমেরিকা৷ মস্কোর ওপর আর্থিক ও কূটনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপের পথে ওয়াশিংটন৷ মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এ কথা। সূত্রের খবর আগামী সপ্তাহেই রাশিয়ার ওপর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে ওবামা প্রশাসন।
ডিসেম্বরেই মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয় সেনেটরদের কাছে৷ সিআইএ নিশ্চিত ২০১৬ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল রাশিয়া৷ রাশিয়ার হ্যাকাররা ভোটের আগে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করেছিল।
সিআইএ -র এই রিপোর্ট হাতে আসার পরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার৷ তবে অস্বস্তি একটা রয়েই যাচ্ছে৷ ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন সাইবার অপরাধ রুখতে নতুন একটি আইন আনে৷ যে আইনে বলা হয় কোনও বিদেশি শক্তির সাইবার হানার ফলে যদি আমেরিকার জাতীয় বা আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷
কিন্তু নির্বাচনে নাক গলানোয় জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে কি না, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে ২০১৫ -র আইনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া মুশকিল৷ তবে সেনেটরদের অনেকে বলছেন প্রয়োজনে আইনে সংশোধনী এনে রাশিয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক৷ আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতামত নির্বাচন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সেখানে কেউ যদি হ্যাক করে ভোটার তালিকা বা এ জাতীয় নানা নথি চুরি করে , তা জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী। সুতরাং রাশিয়ার ওপর এই আইন লাগু হতে কোনও বাধা দেখছেন না অনেকেই৷ সেক্ষেত্রে ২০১৫ -র আইনের আওতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রেসিডেন্ট হয়ে খুব বেশি রদবদল করে উঠতে পারবেন না।
২০১৫ সালে সাইবার অপরাধ রুখতে ওবামা যখন এ আইনটি আনেন, তখন মার্কিন মুলুকে তা বেশ জনপ্রিয় হয়। চীনের হ্যাকাররা মার্কিন সংস্থাগুলির সমস্ত নথি চুরি করে নিচ্ছিল। তখন এই আইন এনে ওবামা হুমকি দেন আমেরিকায় চিনের সমস্ত সংস্থার গেটে তিনি তালা ঝুলিয়ে দেবেন৷ মার্কিন হুঁশিয়ারিতে বন্ধ হয় চিনা হ্যাকিং৷ সেই কায়দাতেই রাশিয়ার ওপর আক্রমণ শানাতে চাইছেন অনেকে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওবামা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার কথায় , ‘রাশিয়ার হ্যাকাররা ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সমস্ত গোপন নথি হ্যাক করে নিয়েছিল এবং তা উইকিলিকসের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ তারপর তো হিলারির নির্বাচনী প্রচারের চেয়ারম্যান জন পোডেস্টার সমস্ত ই-মেল হ্যাক করে ওরা।
এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়াটা একান্ত দরকার৷ অন্য একটি দেশ আমাদের দেশের নির্বাচনে নাক গলাবে তা বরদাস্ত করা যায় না৷ আমাদের তো প্রতি দু’বছর অন্তরই ভোট লেগে থাকে৷’ যদিও আমেরিকার সমস্ত অভিযোগই বারবার উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া৷ তবে আমেরিকার দাবি , ভোটের আগেই রাশিয়ার মতিগতি আঁচ করে কূটনৈতিক স্তরে মস্কোকে সতর্ক করা হয়েছিল৷ সেপ্টেম্বরে জি -২০ সম্মেলনের সময় এ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নাকি কথাও বলেছিলেন বারাক ওবামা৷ তাই প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার আগে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে চান ওবামা।-এই সময়
৩০ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ