আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পরে এক ইস্যুতে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুনিয়েছেন, আর বিনিময়ে মোদী ‘দিদি’ সম্বোধনে একটাই জিনিসকেই নিশানা বানিয়েছেন, আর সেটা হল চিটফান্ড ইস্যু।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলনেত্রীকে এই চিটফান্ড ইস্যুর নাগপাশেই মোদী বার বার বাঁধতে চাইছেন বলেও বহু অভিযোগ উঠেছে। মমতাও কম যান না, মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি যতই হেসে কথা বলুন না কেন, পাল্টা তোপ দাগতেও ছাড়েননি।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর হুমকি দিয়েছিলেন মমতা। এমনকী, প্রধানমন্ত্রীকে নানা সময়ে ‘দাঙ্গাবাজ’ বলেও আক্রমণ শুনিয়েছেন। এরই বদলা নিতেই কি মোদী সিবিআই-কে হাতিয়ার করেছেন? এই নিয়েও তর্কের অভাব হয়নি বহুদিন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থিতিয়ে আসছিল চিটফান্ড ইস্যু। ইতিমধ্যেই সারদাকাণ্ডের প্রভাবশালীদের মধ্যে কুণাল ঘোষ, মদন মিত্র-সহ বেশ কয়েকজন শর্তসাপেক্ষে জামিনও পেয়েছেন। সুতরাং, চিটফান্ড ইস্যু এবার হালকা হবে বলেই বোধ করা হচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, সবই থিতিয়েই আসছিল। যদি না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোটবাতিল ইস্যুতে লম্ফঝম্ফ শুরু করতেন, তা হলে হয়তো বাংলার চিটফান্ডকাণ্ড কার্পেটের তলাতেই থাকত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর কথা বলেছিলেন তখন যথেষ্টই নাকি রেগেছিলেন মোদী।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি বুঝেছিলেন, রাজ্যসভায় বিরোধীদের সমর্থন পেতে গেলে ভারসাম্যের রাজনীতি খেলতে হবে। কিন্তু, তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্যসভায় সেভাবে কোনও পাকাপাকি সমঝোতাই খাড়া করতে পারেনি বিজেপি।
এমনকী, বাংলাতে যে মজবুত সংগঠন ছাড়া ক্ষমতা দখল বিজেপি-র পক্ষে অসম্ভব, তা-ও নাকি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে বুঝতে পেরেছিলেন মোদী। তাই, মমতা এবং তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর নানা ইঙ্গিত নানা সময়ে দিয়েছিলেন মোদী। রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোয় মমতার প্রবলই অনীহা ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে সদ্য নোটবাতিল ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের লম্ফঝম্ফে। নোটবাতিল ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু রাজ্যেই গলা চড়াননি, দিল্লিতে গিয়ে দু’দফায় আন্দোলনও করেছেন। এমনকী, সংসদের মধ্যে তৃণমূলের ২ সাংসদ লোকসভায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভায় ডেরেক ও ব্রায়েন নোটবাতিল নিয়ে মোদীকে তুলোধোনা করেন।
বিজেপি সূত্র বলছে, চিটফাণ্ডকাণ্ডে যে তৃণমূলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতারা জড়িয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই নেতারাই আবার সংসদে এসে দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি সরকারকে গাল পাড়ছে, এটা নাকি মানতে রাজি ছিলেন না মোদী। তাই পিএমও থেকে চিটফাণ্ড-কাণ্ডে সিবিআই-কে উদ্যোগী হতে নির্দেশ যায়। সিবিআই-ও তৈরি ছিল। বহুদিন ধরেই তারা তলে তলে বহু তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বিশেষ সূত্রের দাবি, নরেন্দ্র মোদী হিংসাত্মক বা গলা ফাটানো রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। তিনি শত্রুকে চারদিক দিয়ে ঘিরে নখ-দাঁতহীন করে শিকার করতে ভালবাসেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মোদী এমন বহু নির্দশন রেখেছেন। তাই কোমরের দড়ির মন্তব্যের জন্য এবার মমতাকে নাকি ঢাল-তরোয়ালহীন করতে উদ্যোগী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
মমতার ঘরে ঢুকে একের পর এক ‘সার্জিক্যাল অ্যাটাক’ করছেন মোদী। কিন্তু, মা-মাটি-মানুষে ভরসা রাখা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা স্ট্র্যাটেজি কী হবে? এই মা-মাটি-মানুষকে ভরসা করেই বামেদের ৩৪ বছরের শাসনের নাগপাশকে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন মমতা। এবারও কী মমতার হয়েই মোদীকে চরম জবাব দেবে সেই মা-মাটি-মানুষ? কিন্তু, তাতে কী মোদী থামবেন?-এবেলা
০৪ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/সবুজ/এসএ