সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৫:০৭:৪৬

মোদির হুকুম প্রত্যাখান করলেস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপিতেও ক্ষোভ

মোদির হুকুম প্রত্যাখান করলেস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপিতেও ক্ষোভ

ইসলাম ডেস্ক : ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুখের সংসারে অশান্তির আঁচ। অশান্তির কারণ আপাতদৃষ্টিতে উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে অদূর ভবিষ্যতে তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করতে না পারলে। তেমন পরিস্থিতিতে মোদির সংসারের সঙ্গে মিল পাওয়া যেতে পারে বোফর্স–উত্তর কালের রাজীব গান্ধীর সরকারের। বিরাট গরিষ্ঠতা নিয়েও রাজীব পারেননি সামলাতে। মোদি কি বাঁচাতে পারবেন তার সাজানো বাগান?‌

জবাবটা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১১ মার্চ শনিবারের বারবেলা পর্যন্ত। ভোটের ফল জানা যাবে তখন। কিন্তু দলের ভেতরের কিছু ফিসফাস, উদ্বেগ বেরিয়ে আসছে নেতাদের কথায়। মকর সংক্রান্তির হাওয়া এখন রাজনীতিতে। বিজেপি নেতাদের অনেকের বাড়িতেই গত দুয়েক দিন ধরে চলছে সংক্রান্তির ভোজ, আপ্যায়ন। কেন্দ্রের এক বড় মাপের মন্ত্রীর বাড়িতে এমনই এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের কথাবার্তায় ধরা পড়ছিল সেই উদ্বেগ। তবে সব কথাই খুব চাপা নিচু গলায়।  

উত্তরপ্রদেশে বহু খুঁজেও অখিলেশ বা মায়াবতীর সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো মুখ মোদি–শাহ জুটি পাননি। তাই মোদি চাইছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকেই ফের উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ফেরত পাঠাতে। বিশেষ করে সমাজবাদী পার্টিতে ভাঙনের পর। মোদি শিবিরের অঙ্ক, ওই রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনাথের মতো পোড়খাওয়া কাউকে দলের মুখ করলে ভাল ফল অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু বেঁকে বসেছেন রাজনাথ নিজে। ছ’মাস আগেও একবার এই বিষয়ে রাজনাথের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখনও এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন রাজনাথ। তার যুক্তি, একবার জাতীয় রাজনীতি ছেড়ে রাজ্য রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার অর্থ হল পদাবনতি।

রাজনাথ রাজি নন বুঝে মোদি তখন মন দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে নিজের মতো করে দল গঠনে। কিন্তু মোদির সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খায় মায়াবাতীকে নিয়ে রাজ্যের বিজেপি নেতা দয়াশঙ্কর সিংয়ের কুকথায়। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী বরুণ গান্ধীকে নিয়ে দলের ভেতরে সমস্যা ছিল, তার ওপর উঠে এল অস্ত্রের দালালি নেওয়ার অভিযোগ। আর দিল্লিতে কিরণ বেদিকে নিয়ে পরীক্ষা–‌নিরীক্ষা ভন্ডুল হওয়ার পর রাজনীতির বাইরে থেকে কাউকে এনে দলের মুখ বানানোর ভুলও মোদি আর করতে চান না। তাই আরও একবার তিনি শরণাপন্ন রাজনাথের।

৮ নভেম্বরের আগে মোদি এমন কাতর অনুরোধ করলে রাজনাথ কী করতেন তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু নোটবাতিলের পর পদোন্নতি বা পদাবনতির প্রশ্ন ছাড়াও রাজনাথের সামনে এসে পড়েছে আরও কিছু প্রশ্ন। সেগুলির উত্তর মেলানোর ব্যাপারে রাজনাথ সতর্ক। আগেরবার বিনয়ের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে ফেরত যাওয়ার প্রস্তাবে নাকচ করলেও, এবার কিন্তু প্রত্যাখানে রাজনাথ অনেক বেশি রূঢ়। আর সেটাই চিন্তা বাড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদির। কারণ তার পরিকল্পনা ছিল রাজনাথকে লখনউ পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ভার অতি বিশ্বস্ত অমিত শাহের হাতে তুলে দিতে।

তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পুরো রাশটাই চলে আসতো মোদির হাতে। আর মোদির এমন পরিকল্পনায় রাজনাথের পাশাপাশি আরএসএস সঙ্ঘও অন্য রহস্যের গন্ধ পেতে শুরু করেছে। এমনিতেই সরকার এবং দলে মোদির একাধিপত্যে সঙ্ঘে কিছু অস্বস্তি রয়েছে। তার ওপর মোদি এমনভাবে নিজের বিশ্বস্ত লোকদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসাতে থাকলে সঙ্ঘ যে তার গুরুত্ব হারাবে তা বেশ ভালই বুঝতে পারছে নাগপুর। তাই উত্তরপ্রদেশের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিজেপি–‌র মুখ খোঁজা নিয়ে যখন দলে এত বিতর্ক তখন কিন্তু সঙ্ঘ তা প্রশমনে মোটেই সচেষ্ট নয়। বরং তারা দেখতে আগ্রহী জল কতদূর গড়ায়।
 
রাজনাথ শিবির মোদির এই প্রস্তাবে ১৯৯৩ সালের এক ঘটনার ছায়া দেখছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং তারপর মুম্বাই বিস্ফোরণ, দুয়ে মিলে একেবারে কোণঠাসা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী শারদ পাওয়ারকে মহারাষ্ট্রে ফেরত পাঠিয়ে নিজের গদি নিষ্কন্টক করেছিলেন। নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানির ক্ষোভ কিন্তু সেই সময়ের সরকার বিরোধী ক্ষোভের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সেটাও রাজনাথের জাতীয় রাজনীতির আঙিনা ছাড়তে না চাওয়ার আরেক কারণ।

নোটবাতিলের সিদ্ধান্তে শুধু সরকারের বাইরেই ক্ষোভ রয়েছে এমনটাও নয়। ক্ষোভ রয়েছে বিজেপি–‌র অভ্যন্তরেও। মোদি ভাল করেই জানেন, প্রায় ১০০ জন বিজেপি সাংসদ নোটবাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে না পারলে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগবে না। আর এখন চুপ করে থাকলেও তখন কিন্তু চুপ করে থাকবে না আরএসএস। কারণ স্বাধীনতার পর এই প্রথম নাগপুরের সামনে সুযোগ এসেছে নিজেদের পছন্দের কাউকে দেশের রাষ্ট্রপতি করে পাঠানোর।

সেই সুযোগ কাজে লাগানো যাবে কি না তা অনেকটা নির্ভর করবে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের ওপর। কারণ এই নির্বাচনের পালা শেষ হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন দিকে পাল্লা ভারী। তখন যদি দেখা যায় যে মোদি সঙ্ঘের পছন্দের কাউকে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠাতে পারছেন না, তাহলে কিন্তু আরএসএস ছেড়ে কথা বলবে না।

আড়াই বছর আগের অবস্থানের চেয়ে বর্তমানে মোদির অবস্থান কিছুটা হলেও নড়বড়ে। সেটা মোদির চেয়ে ভাল আর কেউই জানেন না। আরএসএস সঙ্ঘ এবং দলের অভ্যন্তরে কী কী অঙ্ক কষা চলছে তা–‌ও তার বিলক্ষণ জানা। আগেও অনেকবারই মোদি এমন অবস্থায় পড়েছেন। বিশেষ করে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর। মোদিকে নড়ানো যায়নি। উল্টে তিনি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন কেশুভাই প্যাটেল, শঙ্কর সিং বাঘেলার মতো নেতাদের চ্যালেঞ্জ। এবারেও কি তেমনটাই ঘটবে? না এবারের চিত্রনাট্যে ঘটতে পারে কোনও অঘটন?‌ কৌতূহল ক্রমেই বাড়বে।  আজকাল

১৬ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে