মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭, ০১:৩৫:২২

ট্রাম্পযুগে যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে

ট্রাম্পযুগে যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিয়েছেন গত শুক্রবার। কিন্তু দেশটির আড়াইশ বছরের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেনি তাই ঘটছে। সবচেয়ে বড় কথা, তার শপথের পর থেকে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী।

গতকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ছয় শতাধিক ট্রাম্পবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সেসব সমাবেশে নারী বিক্ষোভকারীদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো।

এদিকে শপথ নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে তিনি তার সব ক্ষোভ উজার করে গালিগালাজ করেছেন সংবাদমাধ্যমকে। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকরা পৃথিবীর সবচেয়ে ‘অসৎ মানুষদের’ শ্রেণিভুক্ত। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবাদমাধ্যমকে অভিযোগ করেই ট্রাম্প প্রশাসনের যাত্রা শুরু হলো।

শপথ নেওয়ার পরদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প প্রথম সভা করেন দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এই সভার দিকে অতিরিক্ত নজর ছিল সব মহলের। কারণ নির্বাচনী প্রচারণায়, এমনকি শপথ  নেওয়ার আগেও গোয়েন্দাদের নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন ট্রাম্প। তবে তিনি পাকা খেলোয়াড়ের মতো গোয়েন্দাদের সঙ্গে চমত্কার ঢঙে কথা বলেন। তাদের প্রতি আস্থার বিষয়ে বলেন, শতভাগ না তাদের তিনি সমর্থন করেন ১০০০ ভাগ।

আর গোয়েন্দাদের ভালোবাসতে গিয়ে তিনি তার সব রাগ উগড়ে দেন সাংবাদিকদের ওপর। হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন, সংবাদপত্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক সাপে-নেউলে। সাংবাদিকরা সিআইএ ও তার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। গোয়েন্দা সদর দফতরে দেওয়া ১৫ মিনিটের বক্তব্যের ৯ মিনিট তিনি কথা বলেন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ে।

তিনি অভিযোগ করেন, শুক্রবার তার শপথ নেওয়ার দিন ওয়াশিংটনে যোগ দেওয়া লোকসংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে সব সংবাদমাধ্যম। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শপথ নেওয়ার দিনের চেয়ে লোকসমাবেশ কম হয়েছে বলে প্রায় সব মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেন, সাংবাদিকরা ছবি উঠিয়েছেন কায়দা করে। এমনভাবে ছবি উঠিয়েছেন, যাতে লোকসংখ্যা কম দেখা যায়। নিজের অভিষেকের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকের সমাবেশ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অসততার জন্য সাংবাদিকদের মূল্য দিতে হবে বলেও তিনি বলেন।

তার এই বিষোদগারের কিছুক্ষণ পরই হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিং রুমে উপস্থিত হন ট্রাম্পের সদ্য নিযুক্ত প্রেস সেক্রেটারি সেইন স্পাইসার। স্পাইসার তার প্রথম প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত হন। সেখানেও তিনি লোকসমাগমের বিষয়ে বলেন, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ হাজির হয়েছিল ওয়াশিংটনে। অর্থাৎ তিনিও ট্রাম্পের সুরেই কথা বলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবাদ : ভুয়া খবর প্রকাশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা; মূলধারার মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনা এই দুই অভিযোগ ‘সঠিক নয়’ বলে দাবি করেছে দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নিজের সমর্থন প্রদর্শন করতে গিয়ে তার আগের মন্তব্যগুলোকে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। আগে ট্রাম্পকে জনসম্মুখে গোয়েন্দাবিরোধী কথা বলতে দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক আগে মার্কিন গোয়েন্দাদের জার্মানির নান্সি বাহিনীর সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। অথচ শনিবার সিআইএ’র সদর দফতরে সেই ট্রাম্পকেই দেখা গেছে অন্য ভূমিকায়।

ওয়াশিংটনের রাস্তায় লাখো নারী : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান দেখতে ক্যাপিটাল হিলে যত মানুষ হাজির হয়েছিলেন, পরদিন শনিবার তার বিরুদ্ধে জনস্রোত ওই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। আয়োজকরা বিক্ষোভে দুই লাখ মানুষ আশা করলেও উপস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে। উপচে পড়া ভিড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ওয়াশিংটনের মেট্রো সাবওয়ে সিস্টেম। ব্যাপক জনসমাগমের কারণে ট্রেন চলাচল বিলম্ব হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। প্ল্যাটফর্ম ভরে যাওয়ায় অন্তত একটি স্টেশনে নতুন যাত্রীদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।

এই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও সংগীতশিল্পী ম্যাডোনার মতো অনেক পরিচিত মুখ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। কেটি পেরি, স্কারলেট জোহানসন, প্যাট্রিসিয়া অরকুয়েটি ও মাইকেল মুরের মতো তারকারাও মিছিলে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন বিক্ষোভ আয়োজকরা।

বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নারীদের : গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে উপচে পড়েছিল নারী বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনে আসা নারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, এটা ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলনের শুরু মাত্র। আগামী দিনগুলোতেও এ আন্দোলন চলবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের নারী, অভিবাসী ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ও বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদেই এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এ বিক্ষোভের পরই তারা থেমে যাবেন না। আরও বড় ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

বিশ্বব্যাপী নারীদের এই বিক্ষোভে আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী এভি হারমন বলেছেন, এটা মাত্র শুরু। আমরা রাজপথ ছাড়ব না। এটা হচ্ছে গণমানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। আমরা এসব মানুষের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলছি এবং তাদের নিজ নিজ এলাকার কংগ্রেস সদস্য ও গভর্নরদের কাছে লবিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এখান থেকেই এ কাজ শুরু হচ্ছে আমাদের। এএফপি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, বিডি প্রতিদিন।
২৩ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে