আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপুরক হলেও এই গ্রামে পুরুষ সম্পুর্ণরূপে নিষিদ্ধ! জায়গাটি হচ্ছে কেনিয়ার উমোজা। আফ্রিকার এই দেশটি বিভিন্ন কারণেই বিখ্যাত। এখানকার নারীদের 'মুসলমানি'ও আরেকটি আলোচিত ঘটনা।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কারণে কেনিয়ার বিশ্ববাসী প্রায়ই শুনে থাকেন। কারণ এটিই হল ওবামার জন্মভূমি।
নাগরিকত্ব পরিবর্তন করে আমেরিকবায় গিয়ে ওবামা বিশ্বনেতায় পরিণত হলেও কেনিয়ার ভাগ্য খুব একটা বদলায়নি। সেখানকার মানুষের অবস্থা সেই উপনিবেশিক কেনিয়ার তুলনায় খুব একটা ভালো নয়। দুর্ণীতি আর শোষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশটিতে।
কেনিয়াতেই উমোজা নামক একটি গ্রামের সন্ধান পেয়েছেন অবজারভারের আলোকচিত্রী জর্জিনা গুডউইন। তিনি জানতে পারেন যে, এই গ্রামে কোনো পুরুষকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না তাই নয়, মোটকথা সকল পুরুষকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই গ্রামে।
কিন্তু কেন এই নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হয়েছে, তা জানার চেষ্টাই করলেছেন গুডউইন। ১৯৯০ সালের দিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন কেনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা। সেই নারীদের মধ্যে ১৫জন মিলে পরবর্তী সময়ে এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯ বছর বয়সী জুদিয়াকে ছয় বছর আগে উমোজা গ্রামে আনা হয়। জুদিয়াকে বিয়ের নামে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি কোনো মতে পালিয়ে যান এবং উমোজা গ্রামে আসতে পারেন।
তবে গ্রামবাসীর দাবি, এখন শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে খুব কম নারীই এই গ্রামে আসছে যতটা আসছে বাল্যবিবাহ থেকে পালানোর জন্য। গ্রামে আশ্রিত নারীদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, পরিবারের পুরুষ কর্তৃক নির্যাতন এবং অনাহারজনিত কারণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
আবার অনেক নারীই আছেন যারা দীর্ঘদিন নিজ নিজ সমাজে অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলেন কিন্তু মাথা তুলে দাড়ানো বা অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাদেরই একজন হলেন ২৪ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েলা। ‘আমি আমাদের গ্রামের নারী সমাজে এই গ্রামের কথা শুনেছিলাম।’
প্রথমদিকে অবশ্য শুধু একটি গোত্রের নারীরাই এখানে স্থান পেতো, কিন্তু অবস্থান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোত্রের নারীরাও এখন এই গ্রামে আশ্রয় নিতে পারে।
কিন্তু আশ্রয় নিলেই শুধু হবে না, এখানে তাকে বেঁচে থাকলে গেলে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। অনেক নারীই আছেন যারা তাদের বিভিন্ন শিল্পদ্রব্যকে বিক্রি করে সংসার চালান।
তবে কৃষিকাজেই মূলত তাদের সময় ব্যয় হয় বেশি। পাশাপাশি যেসকল নারীর সঙ্গে তাদের সন্তানেরা রয়েছে তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থাও করতে হয়েছে। আর এজন্য নিজেদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদেরই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শিশুদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে। গ্রামে এজন্য স্থাপন করা হয়েছে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। বর্তমানে গ্রামটিতে প্রায় দুইশ শিশুর বসবাস। সূত্র: মেইল অনলাইন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমিটিনউজ২৪/সৈকত/এমএস