এবার মুসলিম এমপির গায়ে কালি মাখাল শিব সেনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গরু ইস্যুতে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের এক ট্রাক ড্রাইভারকে হত্যার সমালোচনা করায় এবার সেখানকার এক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের শরীরে কালো কালি মেখে দিয়েছে উগ্র হিন্দু সংগঠন শিব সেনার সদস্যরা।
প্রকৌশলী রশীদ নামের ওই এমপিকে সোমবার বিকেলে নয়াদিল্লির প্রেস ক্লাবে কালো কালি মেখে দেয় শিব সেনার তিন ক্যাডার।
জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে গণপিটুনিতে নিহত ওই ড্রাইভারের পরিবারের দুজন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে রশীদ প্রেস ক্লাবে এসেছিলেন।
হামলাকারীদের দুজনকে আটক করা হয়েছে। শিব সেনা হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এর আগে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কাসুরির একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ভারতীয় লেখক সুধীন্দ্র কুলকার্নীর শরীরে আলকাতরা মেখে দিয়েছিল শিব সেনার ক্যাডাররা।
রশীদ বলেন, ‘কুলকার্নীর ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল আজ আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। লোকজন পাকিস্তানে তালেবানিকরণের কথা বলে। দেখুন ভারতে এসব কী হচ্ছে। তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। কাশ্মীরে ৮০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। একজন প্রকৌশলী রশীদের শরীরে কালি মেখে কিছুই পরিবর্তন হবে না।’
গুজবের ওপর ভিত্তি করে হত্যা
গত ৯ অক্টোবর কাশ্মীরের উধমপুরের চেনানি গ্রামের রাস্তায় তিনটি গরুর মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়।
এই গরুগুলোকে মৃত পড়ে থাকতে দেখে এ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে সেখানকার গো-হত্যা বন্ধের সমর্থকরা। ওই সময় রাস্তায় একটি ট্রাক দাড় করানো ছিল।
সেটিকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারলে গুরুতর আহত হন পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী ট্রাকচালক জাহিদ রাসুল বাট ও তার হেলপার শওকত আহমেদ দার।
৭০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় সফদরজঙ্গের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জাহিদ। রবিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
যে গরু হত্যা নিয়ে সহিংসতা পরবর্তীতে ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায়, বিষাক্ত কিছু খেয়ে মারা গিয়েছিল ওই গরুগুলি।
কিন্তু গুজবের ওপর নির্ভর করে ফের হত্যাকাণ্ড ঘটাল চরমপন্থিরা।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গরুর মাংস খাওয়ার গুজবের জের ধরে উত্তরপ্রদেশের দাদরি এলাকায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন মুহম্মদ আখলাক। দাদরি এলাকার উগ্র হিন্দুরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।
অক্টোবরের শুরুতে কাশ্মীরে একজন সংসদ সদস্য তার নিজস্ব পার্টিতে গরুর মাংস পরিবেশন করেছেন এমন অভিযোগে অধিবেশন চলাকালে তাকে মারধর করে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের সদস্যরা।
ভারতে সাম্প্রতিক সময়ের এ ধরনের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান লেখক তাদের রাষ্ট্রীয় পদক ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে ট্রাকচালক জাহিদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তার এলাকা অনন্তনাগের বিক্ষুব্ধ লোকজন রাস্তায় নেমে পড়েন। জাহিদ ও শওকত দু’জনেই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগের বাসিন্দা।
বিক্ষোভকারীরা জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে টায়ার পোড়াতে শুরু করে।
এক পর্যায়ে সেনা-পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষ হয়।
সহিংস পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানী শ্রীনগরসহ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। - বিবিসি বাংলা
২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আসিফ/এআর
�