আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আসাদ সরকারের রাসায়নিক হামলার ‘জবাব’ দিতে এবার সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে আমেরিকা। সিরিয়ার যে সেনা ছাউনি থেকে বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে রাসায়নিক হামলা হয়েছিল, সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন নৌসেনার যুদ্ধ জাহাজ থেকে কয়েক ডজন ক্রুজ মিসাইল ছোঁড়া হল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তি, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই’ এই পদক্ষেপ। সিরিয়া সেনা জানিয়েছে, হামলায় মারা গেছেন ৬ জন। সিরিয়ায় গত ৬ বছর ধরে বাসার আল আসাদ সরকার আর বিদ্রোহীদের সঙ্ঘর্ষ চলছে। ওবামা বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও ট্রাম্পের নির্দেশেই প্রথমবার সেই গৃহযুদ্ধে সরাসরি ঢুকে পড়ল আমেরিকা। ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় ঘাঁটি গেড়ে আসাদ সরকারকে সাহায্য করছে রাশিয়া। পাশে রয়েছে ইরান।
এই ক্ষেপণাস্ত্র হানার পর তাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে নেমে পড়ল আমেরিকা। যদিও পেন্টাগন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, হামলার বিষয়ে রুশ সেনাদের আগেই জানানো হয়েছিল। রুশ এবং সিরিয়ার সেনাদের প্রাণ বাঁচাতে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছে মার্কিন সেনা। ট্রাম্প আবার আসাদের বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধে বাকি দেশগুলোকেও পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোরে সিরিয়ার বিদ্রোহী অধ্যুষিত ইদলিব প্রদেশের খান শেখু শহরের আকাশে দেখা যায় যুদ্ধবিমান। অভিযোগ, রুশ সেনা সমর্থিত সিরিয়া সেনার সেই বিমান থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারিন গ্যাস। দমবন্ধ হয়ে মারা যান ৭২ জন। রয়েছে ২০টি শিশুও। সিরিয়া সরকার যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার পরেই বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ভেসে থাকা মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ থেকে ৫৯টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
লক্ষ্য ছিল শায়রাত বায়ুসেনা ঘাঁটির বিমান, জ্বালানি সংরক্ষণাগার। সিরিয়ার এক টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, হামলায় ঘাঁটির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। তার পরেই নিজের মার–আ–লাগো রিজর্টে দাঁড়িয়ে এই বিমান হানার কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি সম্মেলনে রয়েছেন তিনি। তার মাঝেই বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আসাদের ব্যবহার বদলানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে। সব চেষ্টাই নাটকীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আজ রাতে সিরিয়ায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হানার নির্দেশ দিয়েছি। ওই ঘাঁটি থেকেই রাসায়নিক হামলা হয়েছিল।’
২০১৩ সালেও বিদ্রোহীদের দমন করতে রাসায়নিক হামলা চালিয়েছিল আসাদ সরকার। তাদের ঢিট করতে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যদিও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন তিনি। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূত নিকি হ্যালে জানিয়ে দেন, বাশার আল–আসাদকে সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে এখন আর ততটাও আগ্রহী নয় আমেরিকা। কিন্তু বুধবার ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ইদলিবে রাসায়নিক হামলা তাকে আসাদকে নিয়ে ভাবতে ফের বাধ্য করছে।
যদিও ২০১৩ সালে ওবামা যখন সিরিয়া হামলার কথা ভাবছিলেন, এই ট্রাম্পই তার ঘোরতর বিরোধিতা করে টুইট করেছিলেন। কিন্তু এখন হামলা না করার জন্য পূর্বতন ওবামা সরকারকে দুষছেন। বলছেন, ডেমোক্র্যাট সরকারের দুর্বলতার জন্যই আসাদ এতটা বাড়তে পারলেন।
০৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস