আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর কোরিয়া আর আমেরিকার মাঝে যুদ্ধাবস্থা এখন বিশ্ব রাজনীতির মূল আলোচনার বিষয়।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মার্কিন মুলুকের কাছে উত্তর কোরিয়া মোটেও ফেলনা নয়। এটা সম্প্রতি তারা প্রমাণ করেছে আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত প্যারেডের মাধ্যমে। গোটা বিশ্বকে নিজের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে তারা।
বিশ্লেষকরা নানা হিসাব কষছেন। ট্রাম্প বনাম কিম এমন এক যুদ্ধ, যে যুদ্ধে জিততে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট- এমনটাই মনে করছেন নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের ফেলো এবং বার্ড কলেজের সেন্টার ফর সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের সিনিয়র ফেলো জোনাথান ক্রিস্টল।
নিজের মতামত তুলে ধরেছেন এক প্রতিবেদনে। লিখেছেন, কিম জং উন পাগলাটে নন। কিম জং উন যুক্তিহীন নন। এমনকি তিনি নির্বোধও নন।
আমরা আমেরিকানরা ক্রমাগত এই ভুলটা করে চলেছি। শত্রুকে পাগল, যুক্তিহীন কিংবা নির্বোধ মনে করছি। আমরা আশা করি, অন্যান্য জাতি-রাষ্ট্র তুষ্টির সঙ্গে আমাদের কথামতো চলুক।
আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই তারা নিজেদেরকে পরিচালিত করুক। কিন্তু কোনো বিশ্বনেতা যখন অন্যভাবে করছেন, তখন বুঝতে হবে, তার দৃষ্টিভঙ্গী ও বিচারবুদ্ধি বিষয়ে আমাদের কিছু ভুল ধারণা রয়েই গেছে।
সব রাজনৈতিকব্যবস্থা আমেরিকাকে অনুসরণ করে না। সব সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি নয়। সকলের স্বার্থ আমেরিকার স্বার্থ নয়।
শত্রুকে খাটো করে দেখে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। আমাদের প্রতি উত্তর কোরিয়ার হুমকি এর ব্যতিক্রম নয়।
এটা কি সত্য যে কিম তার নিজ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট গান দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিলেন? দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্যই তা বিশ্বাস করে।
এটা কি সত্য যে কিম অন্য এক সার্বভৌম ভূখণ্ডে অবৈধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে নিজের ভাইকে হত্যা করেছিলেন? বলা যায়, হতে পারে।
এই গা হিম করা তথ্যগুলো আসলে এই তরুণ নেতার বিপুল ক্ষমতার উত্থানকেই প্রকাশ করে। তা ছাড়া কিম কিন্তু তার নিজ দেশের নিয়মেই সকল খেলা খেলে চলেছেন। উত্তর কোরিয়ার নিয়ম-নীতি বলে, কিম হলেন এক 'ঈশ্বরের' নাতী।
গোটা দেশের শর্তহীন আনুগত্যের মালিকানা কিম পরিবারের হাতে। কেউ যদি নিজেকে ঈশ্বরের অংশ বলে মনে করেন, তাহলে তিনি ভিন্ন চিন্তা করতেই পারেন।
কিম অশুভ হতে পারেন। কিন্তু অশুভ মানেই নির্বোধ বা যুক্তিহীন নয়। কিমের মনোযোগ একদিকেই, তার সাম্রাজ্য রক্ষা। ট্রাম্প ইতিমধ্যে এদিকটায় মনোযোগ দিয়েছেন আগামী ৪ বছরের জন্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে কিমের পদচারণা।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতা বা অন্যান্য বিষয়ে সামনা-সামনি বসার মাধ্যমে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ট্রাম্প তার কৌশল দিয়ে কিমকে পরাস্ত করবেন- এটা ভাবা মুর্খতা হবে।
ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু ভালো কোনো পথ নেই। এ যুদ্ধের মূল্য বহন করা প্রায় অসম্ভব।
২০০৬ সালে পিয়ংইয়ং প্রথম নিউক্লিয়ার পরীক্ষা চালায়। কিন্তু তখন থেকেই কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে উত্তর কোরিয়ার মিলিটারির আকার আর আগ্রাসন কেবল বেড়েই চলেছে।
এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতায় যেতে হলে এমন মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন যার ওই অঞ্চল, মানুষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গভীর জ্ঞান রয়েছে।
আঞ্চলিক বিরোধ, মিলিটারি আর নিউক্লিয়ার বিশেষজ্ঞ যিনি। এমন মানুষ দরকার যিনি উত্তর কোরিয়ার কথা শুনতে ইচ্ছুক।
ট্রাম্পকে ছাড়াও কোরীয় অঞ্চলে এই উত্তেজনা মারাত্মক অবস্থার দিকে যাবে। আর যদি ট্রাম্প থাকেনও, তবুও পরিস্থিতি ভয়ংকর রকমের খারাপের দিকেই ধাবিত হবে। কারণ, ট্রাম্প কেবল মুখে যা ইচ্ছা তাই বলে যেতে পারবেন।-সিএনএন
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে