আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতা নিয়ে বহুদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশের উদ্বেগ রয়েছে। এমনকি উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বড় তাৎক্ষণিক হুমকি বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এদিকে উত্তর কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার সক্ষমতার দাবি করেছে। ফলে বিষয়টিকে কেউ হালকাভাবে দেখছে না। তবে বাস্তবে উত্তর কোরিয়ার সক্ষমতা কতখানি তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে।
১৫ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সুংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে পিয়ংইয়ংয়ে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অস্ত্র-সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, কমিউনিস্ট দেশটির মজুতে বিভিন্ন পাল্লা ও ক্ষমতার হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির হাতে পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা এ অঞ্চলের মার্কিন মিত্রদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে? এটা অসম্ভব মনে করা হয় যে ওয়ার হেডসহ পারমাণবিক বোমা বহনে আন্তমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ দূরত্বে আঘাত হানতে পারে, এমন ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচ বছর আগেই তৈরি করেছে উত্তর কোরিয়া। এই ক্ষেপণান্ত্র আমেরিকার মাটিতে আঘাত হানতে পারবে।
এ বছরে তিনটি সফল ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। আরও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। ২০০৬ সালে অক্টোবরের পর থেকে পাঁচটি বড় পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের দাবি, তারা ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে, যা আঘাত হানতে প্রস্তুত। দক্ষিণ কোরিয়ার হিসাব অনুযায়ী, তার প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ায় সেরিন ও ভিএক্সসহ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রভান্ডারের খোঁজ পাওয়াটা কিছু কঠিন। কারণ, দেশটি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পরিচালিত। তবে যেটুকু খবর পাওয়া যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে দেশটিতে ৪ হাজার ২০০টি ট্যাংক রয়েছে। সাঁজোয়া যান আছে ৪ হাজার ১০০টি, বড় কামান ৪ হাজার ৩০০টি, রকেটলঞ্চার ২ হাজার ৪০০টি। এছাড়া রয়েছে কমপক্ষে ৭ লাখ সক্রিয় সৈন্য।
কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও উত্তর কোরিয়ার রয়েছে প্রায় ৭০টি সাবমেরিন। বিমানবাহিনীতে আছে ৫৭২টি অ্যাটাক এয়ারক্রাফট, ৪৫৮টি ফাইটার এয়ারক্রাফট, ১০০টি ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফট, ২০২টি হেলিকপ্টার ও ২০টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।
মার্কিন বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে উত্তর কোরিয়ার হুয়াসং-৫ ও হুয়াসং-৬ স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো স্কাড-বি ও স্কাড-সি নামেও পরিচিত। ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়া পিয়ংইয়ংয়ের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে নডং অন্যতম। এগুলোর পাল্লা এক হাজার কিলোমিটার বা তার বেশি।
উত্তর কোরিয়ার আরও রয়েছে মুসুদান ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্র আড়াই হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থার হিসাবমতে, মুসুদানের পাল্লা ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার। তবে এটি চার হাজার কিলোমিটার দূরেও আঘাত হানতে সক্ষম বলে অনেকে মনে করেন।
২৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস