আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিভাজনের নানা ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে যেন ধর্মের বোধ ও সংজ্ঞাটিকেই গুলিয়ে দিচ্ছে৷ তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু ব্যতিক্রমী ছবি যেন সমস্ত হতাশার মধ্যেও আশার আলো জাগিয়ে তোলে৷ সেরকমই এক ছবি সামনে আনলেন শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু পালিত৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করেছেন কৃষ্ণেন্দু৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে শ্মশানে চিতার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা মুসলমান ভদ্রলোক৷ কেন তিনি শ্মশানে? কৃষ্ণেন্দুবাবু জানাচ্ছেন, তার বন্ধুর দিদির প্রয়াণের জন্যই তিনি শ্মশানে গিয়েছিলেন৷ সেখানেই দেখেন এই ভদ্রলোককে৷ হয়তো একটু চমকে গিয়েছিলেন৷ প্রশ্ন করে জানতে পারেন, এঁকে ভাইয়ের চোখেই দেখতেন বন্ধুর দিদি৷ যাকে ধর্মভাই বলা হয়৷
বন্ধুর দিদির কাছে ইনি ছিলেন তাই-ই৷ হিন্দু বোনের অসুস্থতার খবর পেয়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন বাড়িতে৷ মাথার কাছে বসে দোয়া পড়েছেন, দোয়া করেছেন৷ কীর্তন আর নামাজ চলেছে একসঙ্গে৷ যদিও শেষরক্ষা হয়নি৷ পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন বোন৷ আর তার অন্তিমশয্যা রচনা করতে শ্মশানে পৌঁছেছেন এই বৃদ্ধ ধর্মভাই৷ নিজের হাতে চিতা সাজিয়ে তুলছেন৷ কৃষ্ণেন্দুবাবুর প্রত্যাশা, সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষ একে অপরের ধর্মভাই হয়ে উঠুক৷ সময়ের প্রত্যাশাও বোধহয় তাই-ই৷
বিভাজনের ভেদরেখা যতই মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, আর যে কারণেই মাথাচাড়া দিক, সম্প্রীতির এই ধরনের ছবিও কিন্তু কম নয়৷ এই কিছুদিন আগেই এক হিন্দু হতদরিদ্র পরিবারের যুবকের সকারে এগিয়ে এসেছিলেন মুসলিম গ্রামবাসীরা৷ এক গ্রামবাসী জানিয়েছিলেন, সাধারণ মানুষ ধর্ম নিয়ে এত মাতামাতি করে না৷ যদি দুটো মন্ত্র পড়াই হয়, তাতে কি ধর্ম খোয়া যাবে? ওই যুবককে তারা ভাইয়ের মতোই দেখতেন৷ আর সেই ভাই শেষের দিনে সঙ্গ না দিলে যে আল্লাও তাদের ক্ষমা করত না বলেই মনে করেছিলেন গ্রামবাসীরা৷
অর্থাৎ কোনও ধর্ম তথাকথিত কচকচানি নয়, মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ধর্মকেই মর্যাদা দিয়েছিলেন তারা৷ ঠিক যেমন হিন্দু মন্দিরের জন্য আনায়াসে পৈতৃক জমি দান করেছিল এক মুসলিম পরিবার৷ এ ছবিগুলির পাশেই উজ্জ্বল হয়ে থাকলেন এই বৃদ্ধও৷ সত্যিই যদি সকলেই এভাবে সবার ধর্মভাই হয়ে উঠতে পারেন, তবে পৃথিবীটা যে অন্যরকম হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আর অনেক হতাশার মধ্যেও, অনেক তথাকথিক বিভাজনের কাহিনির মধ্যেও তাই ভরসা জোগায় এই সত্যিগুলিই৷
১ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস