আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের এক বিশেষ আদালত বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের দায়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ক'জন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে অভিযুক্ত করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির সাবেক প্রধান ও দেশটির সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদভানি এবং অন্য দু'জন নেতা মুরলী মনোহর যোশি ও উমা ভারতী।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য এরা উগ্রপন্থী হিন্দুদের প্রতি উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরা সবাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঐ ঘটনার পর ভারত জুড়ে যে দাঙ্গা বাধে তাতে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যায়। হিন্দুরা দাবি করে বাবরি মসজিদ যে জায়গাটিতে অবস্থিত সেখানে হিন্দুদের অন্যতম দেবতা রামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু ১৬শ শতকে ঐ এলাকায় মুসলিম আগ্রাসনের পরে হিন্দু মন্দিরটি ভেঙ্গে সেই জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই বরাবরই বলে আসছে যে রীতিমত পরিকল্পনা করেই মসজিদটি ভাঙা হয়েছিল। গত এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশের পর এই বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। আদালত তার রায়ে বলেছে, এই মসজিদটি ধ্বংসের দায়দায়িত্ব বিজেপির এই তিনজন শীর্ষ নেতাকে গ্রহণ করতেই হবে।
বিজেপির এই তিন প্রবীণ নেতা-নেত্রী-সহ বাবরি মামলার আরও বেশ কয়েক জন অভিযুক্তকে এ দিন হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী আডবাণী, যোশী, উমারা আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন। এ দিন আদালত চত্বরে গিয়ে আডবাণীর সঙ্গে দেখা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আডবাণীরা অবশ্য এ দিন জামিন পেয়েছেন।
চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী-সহ অন্যান্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা শুরু করার অনুমতি দেয় সিবিআইকে। রায়বরেলী এবং লখনউয়ের আদালতকে দু'বছরের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশও দেয় বিচারপতি পি সি ঘোষ এবং বিচারপতি আর এফ নরিম্যান-এর বেঞ্চ।
আদালতে যাতে তাদের ব্যক্তিগত ভাবে হাজিরা দিতে না হয়, সে জন্য আবেদন করেছিলেন আডবাণী এবং ভারতের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী। কিন্তু সে আবেদনে আদালত সাড়া দেয়নি। তাই এ দিন আদালতে হাজিরা দেন শীর্ষ বিজেপি নেতারা।
আডবাণীর সঙ্গে দেখা করতে এ দিন আদালত চত্বরে হাজির হন খোদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দলের প্রবীণ নেতার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বেশ কিছু ক্ষণ কথাও হয়। নতুন করে বাবরি মামলার বিচার শুরু হওয়া নিয়ে আডবাণী বা যোশী এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী বলেছেন, ''আমি কোনও অন্যায় কাজ করিনি। কোনও রকম বিচারের মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না। আইন আইনের কাজ করুক। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, সব প্রমাণিত হয়ে যাবে।''
লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ারদের মতো প্রবীণ বিজেপি নেতা কল্যাণ সিংহও এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। কিন্তু তিনি এখন রাজস্থানের রাজ্যপাল পদে রয়েছেন, তাই আপাতত তাকে মামলার বাইরে রাখা হয়েছে।
রাজ্যপালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরেই তার বিরুদ্ধে এই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হবে। নিম্ন আদালতগুলিকে প্রতি দিন এ বিষয়ে শুনানি চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি, যে সব বিচারকরা এই মামলার সঙ্গে যুক্ত, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও ভাবেই তাদের বদলি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
তবে এদিন বিজেপি শীর্ষ এই নেতৃত্বকে জামিন দিলেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক। এদিন ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে এই বিজেপি নেতারা জামিন পান। বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার ও আর এক হিন্দুত্ববাদী নেত্রী সাধ্বী রীতম্বরাও এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন লালকৃষ্ণ আদবানি সহ বিজেপি নেতৃত্ব ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে আদালতে আর্জিও জানান। বিজেপি নেতাদের জামিন পাওয়ার পরে বর্তমান ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইড়ু জানান, ‘এটা আইনি প্রক্রিয়া। আমাদের নেতারা নির্দোষ। সকলেই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
৩০ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস