আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৫ বছরের ছেলেটা হঠাৎ এক দিন বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল। সাত বছর পর ত্রালের বাড়িতে ফিরেছিল হিজবুল কমান্ডার বুরহান মুজফ্ফর ওয়ানি। তবে নিথর হয়ে।
ছেলের মৃত্যুর ঠিক এক বছরের মাথায় মুখ খুললেন মাইমুনা মুজফ্ফর। বুরহানের মা জানিয়েছেন, তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, তার ছেলে জঙ্গি নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিল।
২০১৬ সালের ৮ জুলাই। এক ধাক্কায় কাশ্মিরের আপাত শান্তির ছবিটা বদলে গিয়েছিল এক বছর আগে। উপত্যকার মোস্ট ওয়ান্টেড হিজবুল কমান্ডার বুরহানকে কোকেরনাগের বিমদুরা এলাকায় তার দুই সঙ্গীর সাথেই হত্যা করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ২২ বছরের এই স্বাধীনতাকামী নেতার মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১০ লাখ টাকা।
বুরহানের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এত দিন খুব একটা কথা বলেনি তার পরিবার। এক বছরের মাথায় ছেলের বিষয়ে কথা বলেন মাইমুনা। ২০১৪ সালে সেনার সাথে সংঘর্ষেই হারিয়েছেন বড় ছেলে খালিদকে। তার আগে থেকেই অবশ্য বাড়িছাড়া বুরহান। বড় ছেলেকে হারানোর পরে মন আরো শক্ত করে ফেলেছিলেন মাইমুনা। জানতেন, ছোট ছেলের মৃত্যুর খবরও এক দিন আসবে।
কেন স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ বেছে ছিল খেলাপাগল বুরহান? সাংবাদিকদের সেই ঘটনা জানিয়েছেন বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর মাইমুনা। পুলওয়ামা জেলার পাহাড়ঘেঁষা ত্রালে বাড়ি বুরহানদের। সালটা ছিল ২০০০। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল মাইমুনার দুই ছেলে, খালিদ আর বুরহান।
মাইমুনা বলেন, ‘ওই ঘটনায় সেনার হাতে খালিদ বেধড়ক মার খেয়েছিল। বাড়ি ফিরেও ভেতরে ভেতরে গুমরোচ্ছিল বুরহান। শুধু বলত, এভাবে চলতে পারে না। খালিদও ওকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল।’
মাইমুনা জানালেন, কাশ্মিরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো দিনই তিনি সেভাবে ভাবেননি। শুধু চেয়েছিলেন, বুরহান যেন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকেই পাল্টে যায় বুরহান।
মাইমুনার কথায়, ‘ও খুব জেদি ছিল সব সময়। যখন চলে যায়, জানতাম স্বাধীনতাকামীদের দলেই নাম লিখিয়েছে। সহজে ফিরবে না। তবু চাইতাম, একবার হলেও যেন ও ফিরে আসে। দূর থেকেই দেখব।
এসেছিল একবারই। কিন্তু দেখা হয়নি। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম আমি। আজো আফসোস করি, কেন সে দিন বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে।’
১০জুলাই ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর