আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের ১৮তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে ৭০ বছরের ইতিহাসে ১৭ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
অনেকেই মনে করছেন সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যেটা গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে। অন্যান্যরা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন।
পাকিস্তানে রাজনৈতিক কূটকৌশলের মাধ্যমে দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী যেভাবে বেসামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, তারা এই ঘটনাকে সেই দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতা হিসেবেই দেখছেন। পনেরো মাস ধরে চলা মামলার শুনানি বিতর্কে জর্জরিত ছিল।
এই মামলা হবার কথা ফৌজদারি আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট, যেটা একটি আপিল আদালত, প্রথমে মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু পরে তারা শুধু মামলাটি আমলেই যে নিলো, তাই নয়, তারা নিজেরাই একটি তদন্ত শুরু করলেন যেখানে সামরিক গোয়েন্দা সার্ভিসকে প্রধান ভূমিকা দেয়া হয়।
অনেকেই মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বিক অভিযান হয়তো স্বপ্নই রয়ে যাবে, তবে এই রায় হয়তো দেশে নতুন রাজনীতিকদের আগমনের পথ খুলে দেবে - যেটা অতীতেও প্রায়ই ঘটেছে। নওয়াজ শরিফ আর মাত্র এক বছরের কম সময় পরে পাকিস্তানের ইতিহাসে মেয়াদ পূর্ণ করা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছিলেন।
শরিফ তিন বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, এবং তিন বারই তিনি মেয়াদ শেষ হবার আগেই ক্ষমতা হারিয়েছেন - প্রথমবার রাষ্ট্রপতির সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে পদত্যাগ করেছেন, দ্বিতীয়বার সেনাবাহিনী তাকে হটিয়েছে, এবার আদালত।
শুক্রবারের রায়ে আসলো মিঃ শরিফের পরিবারের সম্পদ নিয়ে তদন্তের প্রেক্ষাপটে। দু'বছর আগে পানামা পেপারসে যে তথ্য ফাঁস করা হয়, তাতে দেখা যায় মিঃ শরিফের পরিবারের সদস্যরা অফ-শোর কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার করে থাকতে পারে।
নওয়াজ শরিফ এই অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। কিন্তু পাঁচজন বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন যে তদন্তে দুর্নীতির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিচারপতি এজাজ আফজাল খান বলেন, নওয়াজ শরিফ আর ''সংসদের একজন সৎ সদস্য থাকার যোগ্য নন।''
আদালত দেশের দুর্নীতি-বিরোধী সংস্থাকে শরিফ, তার দুই ছেলে, মেয়ে মারিয়াম ও তার স্বামী এবং অর্থমন্ত্রী ইশাক ডার সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে।
তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, এবং ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রধান ছিলেন।
এমটিনিউজ/এসএস