মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৫৮:৪২

রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বিশ্ববাসীর নজরে আনতে মিয়ানমার-বাংলাদেশে আসছেন পোপ

রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বিশ্ববাসীর নজরে আনতে মিয়ানমার-বাংলাদেশে আসছেন পোপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১২০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এ বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসছেন। ভ্যাটিকান থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেম সফর করবেন। এর আগে ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর মিয়ানমার সফর করবেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনা ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পলায়নরত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য পোপ ফ্রান্সিস নিজের অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সোমবার এ ঘোষণা দিল ভ্যাটিকান।

ধারণা করা হচ্ছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আনতে তিনি এই সফর করছেন। ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তবে প্রথম পোপ হিসেবে মিয়ানমার সফর করছেন পোপ ফ্রান্সিস।

সফরের প্রথমে তিনি ধর্মীয় সহিংসতা আক্রান্ত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে যাবেন। পরে সেখান থেকে যাবেন মিয়ানমারের সংঘর্ষের কারণে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশে।

এদিকে পোপ ফ্রান্সিস নিয়মিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের পক্ষে কথা বলে আসছেন। রবিবার রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গাদের উপর শুরু হওয়া সহিংসতার প্রেক্ষিতে রবিবার তিনি বলেন, আমাদের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ভাইদের উপর নির্যাতনের দুঃখজনক খবরে শোক প্রকাশ করছি। আমি তাদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছি তাদের যেন তিনি রক্ষা করেন এবং বিশ্বাসী ভালো পুরুষ ও নারীরা যেন তাদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে।

ভ্যাটিকান হলি সি প্রেস অফিসের পরিচালক গ্রেগ বার্ক সোমবার বলেন, পোপ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশপদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সফরে পোপ শুধু ঢাকা থাকবেন, মিয়ানমার সফরের সময় ইয়াঙ্গুন ও নাইপি দোতে যাবেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের লোগোও উন্মোচন করা হয়েছে। বাংলাদেশের লোগোতে শান্তির প্রতীক ঘুঘুর পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক শাপলার পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলাতে লেখা সম্প্রীতি ও শান্তি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক দিন ধরে রাখাইনে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর পালানোর ঘটনা বেশ বেড়েছে। এরমধ্যেই সোমবার ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থতি ক্যাথলিক সদর দফতর ভ্যাটিকান থেকে পোপ ফ্রান্সিসের ইয়াংগুন এবং ঢাকা সফরের ঘোষণা দেয়া হয়।

অপরদিকে মিয়ানমারে পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ ক্যাথলিক খৃস্টান বসবাস করে। বাংলাদেশে এ সম্প্রদায়ের আকারটি আরেকটু ছোট, এখানে সাড়ে তিন লাখ ক্যাথলিক বাস করেন। মিয়ানমারের নেত্রী অংসান সুচি ইউরোপ সফরে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কিছু দিন পর গত মে মাসে মিয়ানমার এবং ভ্যাটিকানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতি সুচির দেশ মিয়ানমারের আচরণের বিষয়টি আড়াল হয়ে যায়।

সুচির সফরের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নিজেদের বিশ্বাসের জন্য নির্যাতন ও হত্যার শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভাই ও বোন সম্বোধন করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ওই সময় ভাল এবং শান্তশিষ্ট রোহিঙ্গারা বহু বছর ধরে কষ্টের শিকার উল্লেখ করে তাদের জন্য বিশ্বের ১২০ কোটি ক্যাথলিককে তাদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানান পোপ।

সম্প্রতি রাখাইনে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর সর্বশেষ রোববার রোহিঙ্গাদের জন্য আবারও সোচ্চার হন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ভাইদের নিপীড়নের দুঃসংবাদ আসছে। আমি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পূর্ণ একাগ্রতা ঘোষণা করছি। আসুন আমরা সবাই যেন তাদের রক্ষায় প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে এবং তাদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে বিশ্বাসী নারী-পুরুষরা এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পোপ।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে