রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:২৫:০৯

জেলে বসে বিড়বিড় করে দেওয়ালের সঙ্গেই কথা বলছেন রাম রহিম!

জেলে বসে বিড়বিড় করে দেওয়ালের সঙ্গেই কথা বলছেন রাম রহিম!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশাল প্রতিপত্তি এখন অধরা৷ হাতের সামনে শুধুই জেলের গারদ ও পরনে জেলের কাপড়! বাবা রাম হরিমের গায়ে নায়ক, গায়ক, ভগবানের দূত ছেড়ে শুধুই অপরাধী ট্যাগ৷ আর তাতেই হয়তো বাবা গুরমিত রাম রহিমের মাথায় হল ব্যামো!

হ্যাঁ, এরকমটিই আশঙ্কা করা হচ্ছে বাবা রাম রহমকে নিয়ে৷ তিনি যে মানসিক বিকারগ্রস্ত তার পরিচয় তিনি দিচ্ছেন নিজেই৷ তবে প্রশ্ন উঠছে ঘটনাটি সত্যি, নাকি শুধুই নাটক!

খবর অনুযায়ী, বাবা রাম রহিম এখন জেলের খোরাক৷ অন্যান্য কয়েদিরা অন্তত এরকমটিই মনে করছেন৷ কারাগরে বসে চিৎকার, কান্নাকাটির পর ভন্ডবাবা রাম রহিম নাকি একা একাই  কথা বলছেন দেওয়ালের সঙ্গে!

তিন বছর ধরে টানা সম্ভ্রমহানী করেছিলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু। শাস্তি হিসাবে জেলে কাটাতে হবে ২০ বছর। দুই সাধ্বীকে সম্ভ্রমহানীর দায়ে গুরমিত রাম রহিমকে ১০ বছর করে দুটি অপরাধে কারাদণ্ডের রায় দিল বিশেষ সিবিআই আদালত। জেলে বাড়তি কোনও সুবিধা জুটবে না স্বঘোষিত ধর্মগুরুর। আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে রাম রহিমকে।

জেলে ঢুকলেও এদিন আদালতে বারবারই নিজের মহিমা দেখালেন বাবা। বারবার নাটক করে সাজা কমানোরও নিষ্ফল চেষ্টা করলেন। গত সোমবার রাতটা জেলেই কাটাতে হয়েছে বাবাকে৷ জেলে বাবার পরিচয় কয়েদি নম্বর ৮৬৪৭ ৷ জেলের প্রথমদিন কেমন কাটলো রাম রহিমের৷  রাতে বাবাকে চারটি রুটি খেতে দেওয়া হয়৷ কিন্তু এক টুকরো খেয়ে আর খাননি৷

রিপোর্ট অনুযায়ী, চারটি রুটি আর সবজি দেওয়া হলেও তা অবশ্য মুখে রোচেনি। কোনওমতে আধখানা রুটি আর সবজিতেই কাজ চালিয়েছেন। অনেকক্ষণ খাওয়ারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তিনি৷ এরপর খিদে নেই বলে খাবার ফেরত দিয়ে দেন৷ গোটা রাত সেলের ভিতর পায়চারি করতে থাকেন৷ গোটা রাত ঘুমতো পারেননি৷ জেল থেকে দেওয়া সাদা বেডশিট আর কম্বলে ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছেন তিনি।

জেলে একটি ফর্ম দেওয়া হয় তাকে যাতে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনি কোন কাজ করতে চান৷ জেলের নিয়ম অনুযায়ী, কাজ করার জন্য প্রত্যেকদিন তাকে ৪০ টাকা দেওয়া হবে৷ মালি বা কারখানায় কাজ করার অপশন দেওয়া হয়েছে বাবাকে৷

এর আগে কোর্টে জেলের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ জানান বাবা রাম রহিম৷ বাবার জামিনের আবেদনেও আগামী সপ্তাহেই হাইকোর্টে যাচ্ছে ডেরা। সেখানে আবার অন্য আইনি লড়াই। সিবিআই সূত্রে অবশ্য ইঙ্গিত, উচ্চতর আদালতে বাবা গুরমিত রাম রহিমের শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধির আবদন করা হবে।

আদালতের রায়ের পর এখন শ্রীঘরই বাবার নয়া ডেরা। বৈভবের প্রাসাদে থাকাই ছিল অভ্যাস। জেলে তাই সারারাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারলেন না গডম্যান রাম রহিম। কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক এখন দিনমজুরি পাবেন চল্লিশ টাকা।

আপাতত দু'হাজার সাঁইত্রিশ সাল পর্যন্ত জেলেই ঠাঁই। সাজা পেয়ে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে রাম রহিমের। সারারাত জেল ব্যারাকেই পায়চারি করে কাটিয়েছেন। ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান থাকার সময় সম্পত্তির অঙ্কের তো মাপকাঠি ছিল না। জেলে অবশ্য বদলেছে হিসেব।

কম শিক্ষিত হওয়ায় জেলে কায়িক শ্রম করতে হবে বাবা-কে। গায়ে গতরে খাটতে হবে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত। অন্য বন্দিদের খাটিয়া বা চেয়ার বুনতে হবে । পছন্দ না হলে হয় বাগান পরিচর্যা বা জেলের বেকারিতে বিস্কুট তৈরি। এতদিন এসি রুমে থেকেছেন। জেলের সেলে অবশ্য অন্য বন্দিদের মতোই কাটাতে হচ্ছে বাবকে।

সুনারিয়া জেলে রয়েছে আটজন গ্যাংস্টার আর পঞ্চাশজন দাগী অপরাধী। নিরাপত্তার জন্য পৃথক একটি সেলে রাখা হয়েছে বাবাকে। খাবারও মাপা। পাউরুটি আর চায়ে সারতে হবে প্রাতরাশ। দুপুরে বরাদ্দ পাঁচটা রুটি আর ডাল। সন্ধেবেলায় চা আর রাতে রুটি-সবজি। সারাদিনে আড়াইশো গ্রামের বেশি দুধ পাবেন না বাবা। গডম্যানকে দেওয়া হয়েছে আলাদা প্লেট আর মগ।

জেলে বাবাকে ছাড়তে হয়েছে গডম্যানের খোলস। পরতে হয়েছে কয়েদিদের পোশাক। সঙ্গে আনা লাল সুটকেস, বাড়ি থেকে আনা পোশাক বা ওষুধের মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে সবকিছুরই। অতীতে রকস্টার বাবাকে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দিত হরিয়ানা সরকার। সুনারিয়া জেলে রাম রহিমের নিরাপত্তার দাযিত্বে দুই সিনিয়র পুলিশ অফিসার। আর সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে বাবার উপরে নজর রাখবেন দুজন সান্ত্রী।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে