রাশিয়ার বিমান হামলায় নিহত সিরীয় শিশু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে রাঘাদ। বয়স হবে চার কি পাঁচ। গায়ে নীল-সাদা ফ্রক। আর লাল ব্যান্ড দিয়ে মাথার চুলগুলো পরিপাটি করে বাঁধা। চোখে-মুখে আনন্দ যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে। কারণ এই প্রথম বার দাদুর বাড়ি বেড়াতে এসেছে সে। তাই পরিবারের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে ব্যস্ত ছিল খুদে এই পরীটি। কিন্তু কে জানত, ওই ছবিটাই ছোট্ট মেয়েটার জীবনের শেষ ছবি হয়ে যাবে। আর কোনো দিনো ক্যামেরার সামনে এইভাবে প্রাণোচ্ছ্বল হাসি হাসবে না সে। কারণ তার এক ঘণ্টার মধ্যেই রুশ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই শেষ হয়ে গেল ছোট্ট রাঘাদ।
শুধু রাঘাদ নয়, ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তার দাদু এবং আরও এক আত্মীয়।
ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি নিধন করার জন্য সিরিয়া সরকারকে সাহায্য করছে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া বিমান হামলায় জঙ্গিদের থেকেও সাধারণ নাগরিকরা বেশি হারে প্রাণ হারিয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছে সিরিয়ার এক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা। ওই সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গত মাসেই রুশ বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ১৮৫ নাগরিক। আর সেখানে মাত্র ১৩১ আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছে।
আবার, মধ্য সিরিয়ার পালমাইরায় আইএস জঙ্গিদের খতম করতে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। তাই বাঁচার তাগিদে আশপাশের এলাকা থেকে সপরিবার পালাচ্ছেন অনেকেই। এদের মধ্যেই এক জন আনোয়ার আহমদ আবদুল্লা। স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে অন্যত্র গিয়েছেন। তিনি জানালেন, নিজের দেশ ছেড়ে পালানোর ইচ্ছেই ছিল না। কিন্তু রুশ বিমান হামলার ভয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। আর বিমান হামলায় বড়দের তুলনায় শিশুদের মনে প্রভাব পড়েছে বেশী। তারই প্রমাণ আনোয়ারেরই ছেলে। সে সব থেকে কীসে ভয় পায়, জানতে চাওয়া হলে সাত বছরের ওই খুদে হাত-পা নেড়ে বলে ওঠে, বিমানেই বেশি ভয়। বিমানের আওয়াজেই চমকে ওঠে ছোট্ট ছেলেটা।
এ দিকে, সিরিয়ার ওই পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই হমস্ প্রদেশে আইএস নিধনে রাশিয়া আকাশপথে হামলা চালিয়েছে। তাতেই নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩ নাগরিক। এঁদের মধ্যে রয়েছেন এক মহিলা এবং তিন শিশু।
রুশ বিমান হামলায় নিহতদের তালিকায় এ বার যুক্ত হয়েছে ছোট্ট রাঘাদের নামও। পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, জন্মের পর থেকে এক বারও দাদুর বাড়িতে ঘুরতে যায়নি সে। তাই চার বছর পর মায়ের সঙ্গে তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় দাদুর বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু রাঘার আর বাড়ি ফেরা হল না। চলছিল বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। আবার কবে আসা হয়, তাই পারিবারিক অ্যালবামের জন্য ছবি তোলা চলছিল। কিন্তু তার ঠিক এক ঘণ্টা পর কান ফাটানো আওয়াজ। রুশ বিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছিল দাদুর বাড়ির বাগানে। রাঘাদকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তার ঠাকুমা। আদরের নাতনিকে কোলে করে নিয়ে ছুটেছিলেন বাগানের একটি ছাউনিতে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ছিল ছাউনিটিও। আর তার নীচেই চাপা পড়েছিল রাঘাদ। পরে ওই ধ্বংসাবশেষ থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছোট্ট দেহটা উদ্ধার করা হয়েছে।
সে দিনের রুশ বিমানহানায় ঝলসে গিয়েছিলেন রাঘার ঠাকুমাও। তবে প্রাণে বেঁচে যান। এর পরে কেটে গেছে চার সপ্তাহ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। এখনও জানেন, স্বামী এবং নাতনি দুই জনেই জীবিত। তাই মাঝে মধ্যেই ছেলের কাছে জানতে চাইছেন স্বামীর কথা। ফোনে কথা বলতে চাইছেন স্বামীর সঙ্গে। তাই ছেলেই নিজের ফোন থেকে বাবার ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে সামাল দিচ্ছেন মাকে।
কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে নিজের প্রিয় মানুষ দুই টিকে না দেখতে পেয়ে ওই বৃদ্ধা কী করবেন, সেই উত্তরটাই এখন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর ছেলে।
৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ