শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৩২:১৪

সেনাবাহিনীর সদস্যরা সুন্দরী রোহিঙ্গা যুবতীদের ধরে নিয়ে যায় জঙ্গলে

সেনাবাহিনীর সদস্যরা সুন্দরী রোহিঙ্গা যুবতীদের ধরে নিয়ে যায় জঙ্গলে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাত নামলেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে দরজায় টোকা দেয়। ঘরের ভেতরে ঢুকেই তারা খোঁজে সুন্দরী মেয়েদের। পছন্দমতো কাউকে পেয়ে গেলে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় জঙ্গলে। এরপর নির্যাতন করে। কারো কপাল ভালো হলে গ্রামের রাস্তার পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় তাকে ফেলে যায় তারা। অন্যদের মেরে ফেলা হয়। তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা এভাবেই বর্ণনা করেন কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী হামিদা খাতুন।

২৫শে আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চলছে অকথ্য নির্যাতন। এ জন্য তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এখানে আশ্রয় নেয়া এমন আরো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ রাখাইনে সংঘটিত নৃশংসতার কথা তুলে ধরেছেন। তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়েছে, বনের ভেতর দিয়ে টানা তিনদিন খালি পায়ে হেঁটেছেন বেগম বাহার। এ সময় কাপড় দিয়ে পিঠের সঙ্গে বাঁধা ছিল তার আট মাস বয়সী শিশু। বনের বিভিন্ন জিনিস খেয়ে জীবন রক্ষা করেছেন। তৃষ্ণার্ত হলে পান করেছেন লোনা পানির ধারা থেকে পানি। এটাই তার সঙ্গীদের সফরের শক্তি যুগিয়েছে।শেষ পর্যন্ত বেগম বাহার যখন নাফ নদে পৌঁছেন তখন তিনি নৌকা দেখতে পান। এসব নৌকায় করে শরণার্থীদের পার করে দেয়া হচ্ছে। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন। মনে করেন, এটাই তাকে ও তার সন্তানকে নিরাপদে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে বসে পড়েন। কান্নায় ভেঙে পড়েন। নৌকায় উঠেই যেন তার চেতনা ফেরে।

খালি পায়ে কেটে, ছিঁড়ে যাওয়া স্থান দিয়ে রক্ত ঝরছে। তিনি ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন। চন্দ্রাকৃতির নৌকায় করে নদী পার হন তিনি। এভাবেই হাজার হাজার রোহিঙ্গা মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নৌকা ছুটে চলতে থাকে। বেগম বাহার পেছনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আস্তে আস্তে রাখাইনের স্থলসীমানা তার দৃষ্টিসীমা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। ওই দেশ, ওই মাটিই তার জন্মভূমি- এ কথা ভেবে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন বেগম বাহার। ওই সেই দেশ যেখানে তিনি জন্মেছেন, কিন্তু তাকে রাষ্ট্রহীন করে রাখা হয়েছে, গৃহহীন করা হয়েছে। বেগম বাহারের মতো প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

বেগম বাহার বলেন, আমরা জানি মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করে সব সময় সেটাই তার মাতৃভূমি। চরম অবস্থায় ঠেলে না দিলে কেউ কোনোদিন তার ‘মা’কে ছেড়ে যায় না। তাই আমাদের সামনে কোনো বিকল্প পথ ছিল না, দেশ ছেড়ে আসা ছাড়া। সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামগুলোতে ঢুকে কোনো দেখভালের তোয়াক্কা না করে অবাধে হত্যাকাণ্ড শুরু করে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে