আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়েব এরদোগানের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় করতে বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এবং বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের কথা তুলে ধরে চিঠিতে তুর্কি ফার্স্ট লেডি লিখেছেন, চলমান মানবিক সঙ্কটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কান বন্ধ করে রেখেছে এবং না দেখার ভান করছে, এটি খুবই লজ্জাজনক। নির্যাতনের শিকার অসংখ্য নারী, যাদের শিশু ও স্বামীদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে চোখের সামনে তাদের দুর্দশার কথা শোনা ছিল ভীষণ কষ্টের। আমি কখনো ওই নারী ও শিশুদের কথা ও বেপরোয়া চাহনি ভুলতে পারব না। প্রাথমিকভাবে আমরা রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি।
চিঠিতে এমিনি এরদোগান তুরস্কের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিভিন্ন সময় সহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। রাখাইনে চলমান সহিংসতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লিখেছেন, একজন মা, নারী ও মানুষ হিসেবে আমি মনে করি আমাদের উচিত এমন একটি পৃথিবী গড়ে তোলা যেখানে কেউ জাতিগত বা ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হবে না। তুর্কি ফার্স্ট লেডি আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বনেতাদের স্ত্রীরা এমন পৃথিবী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এমিনি এরদোগান। এ সময় তার সাথে তুুর্কি রাজনীতিবিদ ও দেশটির ত্রাণ সংস্থার প্রধান সফরসঙ্গী ছিলেন। রোহিঙ্গা শিবিরে তিনি ত্রাণ বিতরণ করেন।
জাতিসঙ্ঘের কাঠামো সংস্কার প্রয়োজন : এরদোগানের মুখপাত্র
বৈশ্বিক সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘের ‘বর্তমান কাঠামোর’ সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। তুরস্কের সাবাহ পত্রিকায় ‘ইউএন অ্যান্ড গ্লোবাল ডিসওর্ডার’ শিরোনামের লেখা এক নিবন্ধে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের শীর্ষ মুখপাত্র কালিন বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের বর্তমান কাঠামো বহাল থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত চাপের মধ্যে থাকা বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না।’
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই জাতিসঙ্ঘের ‘অভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মসূচি’ না থাকাটা সংস্থাটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য অনেকে আছেন যারা আমাদের ‘বৈশ্বিক পল্লীর কল্যাণে আসলেই পরিবর্তন’ আনার চেষ্টা করছেন।
এরদোগানের বিখ্যাত উক্তি ‘বিশ্ব পাঁচ শক্তির চেয়ে অনেক বড়’ উদ্ধৃত করে কালিন বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান কাঠামোর মধ্যেই সমস্যা নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘকে ২১ শতকের জন্য অর্থবহ ও উপযোগী করতে হলে অবশ্য এর কাঠামোর সংস্কার করতে হবে। তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, বিশ্বের সমস্যাগুলো নিরসন করার জন্য জাতিসঙ্ঘের সাংগঠনিক কাঠামোর সংস্কার করা প্রয়োজন।
‘জনগণকে নিয়ে আলোচনা : একটি স্থিতিশীল বিশ্বে সবার জন্য শান্তি ও সুন্দর জীবন গড়ার সংগ্রাম শীর্ষক’ এবারের সাধারণ অধিবেশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবার জন্য সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কালিন বলেন, ‘বাস্তবতা হলো পুজিবাদ’। তিনি আরো বলেছেন, জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলো ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘সিরিয়া ও মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা দেখলেই এর বাস্তবতা অনুধাবন করা যায়, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, জাতিগত সহিংসতা, কোনো অপরাধই প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই জাতিসঙ্ঘের।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস