আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। দেশটির শান্তিতে নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চির ভূমিকারও সমালোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার, নানান ধর্ম-বর্ণের মানুষই ঘৃণা জানাচ্ছেন-প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কেউ লিখছেন, কেউ বলছেন, কেউ আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন।
বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করছে যে, মানবাধিকারের বিষয়ে সু চি তার বলিষ্ঠ প্দক্ষেপ নিবেন। কিন্তু বিশ্ববাসীকে হতবাক করে নিয়ে সহিংসতা বন্ধে তিনি কোন প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করা হচ্ছেন তিনি। অং সান সু চির নিরবতায় বিশ্বের সচেতন মানুষ হতভম্ব হলেও তাদের অনেকেই জানেন না তার নোবেল কেড়ে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়ে কোনো লাভ নেই।আর সু চিরও তেমন কোনো ক্ষমতা নেই! সু চি দাবার ঘুঁটি বা বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।
জানা যায়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ী আসল ব্যক্তিটি হচ্ছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মিন অং হ্লাইং। সুচি নন তিনিই মূলত সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন। সুচির নিন্দাই তিনি দেখতে চান। বিশ্ববাসীর নজর সু চির দিকে, তিনি নিজে নজর এড়িয়ে রোহিঙ্গা নির্মূলাভিযান নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। মিয়ানমারের সংবিধানের খসড়া করেছে সামরিক বাহিনী। এই সংবিধান অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ওপর সু চির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
সামরিক বাহিনী দেশটিতে স্বাধীন। দেশটির পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, কারাগার ও সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। সেনাবাহিনীর জন্য পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। মিয়ানমারে মিন অং হ্লাইং দ্বিতীয় এক সরকার চালান, যে সরকার হলো সশস্ত্র সরকার। মিন অং হ্লাইং এর নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সেনাবাহিনী। মিন অং হ্লাইং-এর সেনাবাহিনী ঘরোয়া বিভিন্ন সংঘাতেও যুক্ত ছিল। কাচিন ও শান রাজ্যে প্রচুর বেসামরিক মানুষ মেরেছিল। জাতিগত নিধনের জন্য মিন অং হ্লাইং দায়ী। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতিসংঘ তদন্ত চালাচ্ছে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে প্রধান বাধা তিনিই।
এমন বাস্তবতা থাকার পরও সু চি’র নিরবতায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করে স্মিথ বলেন, ‘তার সরকারের নিরবতায় আমি হতাশা বর্ণনা করার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি।’ রবিবার উইকলি নিউজ ‘ওয়েল্ট অ্যাম সনট্যাগ’কে দেয়া সাক্ষাতকারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলিও। অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়ানমার বিশেষজ্ঞ এন্থনি উয়ারি বলেন, ‘সু চির নীরবতা একটি ‘দীর্ঘমেয়াদী সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা। আমরা (সু চি বা এনএলডি) থেকে এ বিষয়ে কোনো নেতৃত্ব দেখতে পাইনি।’
সূত্র: এএফপি, সিএনএন ও হাফিংটন পোস্ট
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস