‘পালাও নইলে মেরে ফেলব সবাইকে’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সহিংসতা থেকে যেসব রোহিঙ্গা প্রাণ নিয়ে পালানোর সুযোগ পায়নি, কিংবা কোনো কারণে থাকতে বাধ্য হচ্ছে রাখাইনে- তাদের প্রতিমুহূর্ত মৃত্যু আতঙ্কে কাটছে। প্রতিদিন হত্যার হুমকি দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী ও স্থানীয় উগ্র বৌদ্ধরা। রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে এ কথা।

গত ২৫ আগস্ট উত্তর রাখাইন রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর বেশির ভাগ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তবে অনেকেই আবার পালানোর সুযোগটাও পায়নি। নিরুপায় হয়ে রাষ্ট্রীয় বর্বরতাকে মেনে নিতে হচ্ছে তাদের। আটকেপড়া এমন অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে জানিয়েছে বেঁচে থাকার আকুতি। তাদেরই একজন রোহিঙ্গা মং মং। টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়ে আছি। কিছুদিন পর থেকেই আমাদের অনাহারে থাকতে হবে। সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক রোহিঙ্গা জানান, তাদের গ্রামে রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন গিয়েছিল। যাওয়ার সময় তারা বলে, ‘চলে যাও, নইলে সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলব’।

রাখাইনের রাথিডং অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ২১টি গ্রামের মধ্যে ১৬টিই এখন জনশূন্য। গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেখান থেকে পালিয়েছে কমপক্ষে ২৮ হাজার রোহিঙ্গা। বাকি পাঁচটি গ্রামে এখনো আটকে রয়েছে আট হাজার রোহিঙ্গা। রয়টার্সকে মং মং বলেন, তার গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকির কথা পুলিশকে কমপক্ষে ৩০ বার জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। কাজটি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে জানায় পুলিশ।

মং মং আরো বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রামের এক পরিচিত লোক ফোন করে তাকে বলে ‘কালই পালাও, নইলে আমরা কাল আসব আর তোমাদের সব ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবো’।

রাখাইনের বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় অঞ্চলের প্রধান ক্যাটরিনা অ্যাডামসের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, সেখানে লাখ লাখ মানুষ খাদ্য, পানি ও বাসস্থান সঙ্কটে রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের সহায়তা করা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মং মং জানান, অভিযোগ করার পর তাদের জানানো হয়, মিয়ানমার সরকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের রাখাইনে থাকতে দিতে চায় না। তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে পারে। এতে রোহিঙ্গারা সম্মত হয় বলে জানান মং মং। তবে তারা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চান।

অভিযোগের বিষয়ে রাখাইনের সেক্রেটারি তিন মং সুই বলেন, রাখাইনে এমন কিছুই হচ্ছে না। সবাই নিরাপদেই আছে। একই কথা বলেছেন দেশটির জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র মোয়ো থু সেই। তিনি বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হবে বলে রয়টার্সকে আশ্বাস দেন।-রয়টার্স
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস