মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০১:৪৫:১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে এই প্রথম মুখ খুললেন সু চি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে এই প্রথম মুখ খুললেন সু চি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের সতর্কবার্তায় মিয়ানমার সরকার ভীত নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি। গত ২৫ আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে 'জাতিগত নিধন' শুরুর পর বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে এই প্রথম মুখ খুললেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি।

আজ (মঙ্গলবার) জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সু চি বলেন, “অন্যের ওপর দোষারোপ কিংবা দায় অস্বীকার করা মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশ্য নয়। আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি সহিংসতার নিন্দা জানাই। আমরা রাজ্যে (রাখাইন) শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।”

রোহিঙ্গারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবি করে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান বলেন, “আমরা শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা রাখাইনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা শান্তি চাই, ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না।“

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব নেতারা মিয়ানমারে আসুন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, দেখুন কেন রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে স্বীকার করে সু চি বলেন, রাখাইন থেকে মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে তারা (সরকার) উদ্বিগ্ন। তারা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানায়। তবে, বেশিরভাগ মুসলিমই রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালায়নি এবং সেখানে সহিংসতা প্রশমিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সু চি জানান, “১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া সমঝোতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে সু চি সরকার প্রস্তুত।“ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে কফি আনান কমিশনের সব ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন সু চি। তিনি বলেন, “অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ আছে এবং আমাদের সবই শুনতে হবে। কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগে এই অভিযোগগুলো যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে করা হচ্ছে কি না, তা আমাদের নিশ্চিত হতে হবে।”

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সাফাই গেয়ে বলেন, “মাত্র ১৮ মাস হলো আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমাদের অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এতো অল্প সময়ে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমাদের শুধু অল্প কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিলে হবে না।”

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে 'জাতিগত নিধন' উল্লেখ করে তা বন্ধে বারবার সতর্ক করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়ে এতে কোনো বেসামরিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না বলে দাবি করেছে।

এ অবস্থায় জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টেনিও গুতারেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যদি এই মুহূর্তে সু চি কোন পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি কিভাবে পরিবর্তন আসবে তা নিয়েও ভয়ের কারণ রয়েছে।

আর আসলে আমি জানি না সেই ভয়ানক পরিস্থিতির পরিবর্তন কিভাবে আসবে।” এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন রাখাইনের ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। --পার্সটুডে

এমটিনিউজ২৪/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে