ভারতে অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন যারা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার কারণে ও খুনের প্রতিবাদে এবার জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে চলেছেন বুকার পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়। একই প্রতিবাদে জাতীয় পুরস্কার ফেরাচ্ছেন পরিচালক কুন্দন শাহ ও সৈয়দ মির্জা-সহ আরও এক ঝাঁক শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী তাদের জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
অরুন্ধতী রায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার তীব্র সমালোচনা করে নিজের ব্লগে লিখেছেন, 'প্রথমত, গণপিটুনিতে হত্যা, গুলিচালনা, পুড়িয়ে দেওয়া ও গণহত্যার ঘটনাগুলিতে অসহিষ্ণুতা শব্দটিও ব্যবহার করা ভুল। যারা জীবিত, তাদের কাছেও এই সমাজ নরক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লক্ষ লক্ষ দলিত, আদিবাসী, মুসলিম ও খ্রিস্টান আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা জানেন না, কখন কোন দিক থেকে অত্যাচার নেমে আসবে।'
বুকার পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায় ১৯৮৯ সালে 'ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোজ ওয়ানস' ছবিটিতে সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান। তা ছাড়া সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের প্রস্তাবও তিনি আগেই ফিরিয়ে দেন।
বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা সৈয়দ আখতার মির্জা ১৯৮৪ সালে মোহন জোশী হাজির হো ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, পরে তিনি আরও দুবার এই সম্মান লাভ করেন।
সিনেমা জগতের দিকপালরা যেভাবে অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে একজোট হচ্ছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে সৈয়দ মির্জা বলেন, ‘এখন যদি আমরা প্রতিবাদ না-করি, তাহলে আর কখন করব?’
অরুন্ধতী ছাড়াও এদিন জাতীয় পুরস্কার ফেরানোর কথা ঘোষণা করেন পরিচালক কুন্দন শাহও। পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া(FTII)-এর চেয়ারম্যান পদে বিজেপি সদস্য ও অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ ও অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদেই জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন কুন্দন। 'জানে ভি দো ইয়ারোঁ' ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন এই পরিচালক।
কুন্দন শাহ-ও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন আশির দশকে তার কাল্ট-ক্লাসিক ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ ছবির জন্য। তিনি সেই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, আজকের পরিবেশে হয়তো ‘জানে ভি দো ইয়ারো’-র মতো ছবি বানানোই সম্ভব হত না।
সৈয়দ মির্জা, কুন্দন শাহ-সহ ভারতীয় সিনেমা জগতের মোট ২৪জন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব আজ একযোগে তাদের পুরস্কার সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
ভারতে সম্প্রতি এই পুরস্কার বর্জন করার ধারার সূচনা করেছিলেন দেশের বিভিন্ন ভাষায় লেখালেখি করা সাহিত্যিকরা। একের পর লেখক অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন।
এরপর দেশের বহু শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, চিত্র পরিচালক ও ইতিহাসবিদরাও একে একে সেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। তবে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার একে ‘সাজানো প্রতিবাদ’ বলেই এ যাবত নাকচ করে এসেছে।- বিবিসি, টাইমস অপ ইন্ডিয়া।
৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�